বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জরুরি চিকিৎসায় স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০৭:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

জরুরি চিকিৎসায় স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব

স্ট্রোক করার পর সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ের মধ্যে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বি ব্লকের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে নিউরোসার্জারি বিভাগের আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনার আলোচকরা এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


‘জানুন স্ট্রোকের লক্ষণ, মিনিটেই বাঁচিয়ে দিন বহু জীবন’ এই স্লোগানে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমানো সম্ভব। স্ট্রোক রোগীদের বিশেষ করে মাথায় রক্তক্ষরণ হলে জরুরি অপারেশন প্রয়োজন হয়। ইসকেমিক স্ট্রোক বা রক্তবাহিকা নালিকা বন্ধ হলে জরুরি অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইন্সসহ দেশের পনের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোকের অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনে বিশেষায়িত হাসপাতালে আসা হবে। এছাড়া শতকরা ৮০ ভাগ স্ট্রোক আক্রান্ত ওষুধের মাধ্যমেই ভালো হয়।

আলোচকরা বলেন, বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বিশ্বের মৃত্যুর প্রতি চারজনের একজনের মৃত্যু হয় স্ট্রোকের কারণে। বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ জন স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয়। বিশ্বের ১০০ জন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ৪৮ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগেন। বিশ্বে প্রতি হাজারে আট থেকে ১০ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে।

শিশুদের স্ট্রোকের তথ্য তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে প্রতি লাখে দুই থেকে ১৩ জন শিশু স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। শিশুদের মস্তিস্কে স্ট্রোকের অর্ধেক হয় রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে। আর বাকি অর্ধেক হয় মস্তিস্কের রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে। বছরে ১০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু স্ট্রোকে মারা যায়। ২৫ ভাগ শিশু বারবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। স্ট্রোকে আক্রান্ত ৬৬ ভাগ শিশুদের হাত পায়ের দুর্বলতা, খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। স্ট্রোকে আক্রান্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও ব্যাঘাত ঘটে।

স্ট্রোকের প্রতিকার তুলে ধরে তারা বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধে সাতটি পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো, খাবারে তেল ও লবণের ব্যবহার কমানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্ট্রেস কমাতে নামাজ, উপাসনা বা মেডিটেশন করা।


বিজ্ঞাপন


এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১০০টি বেডের অত্যাধুনিক স্ট্রোক ইউনিট চালু হলে দেশের রোগীদের আর বিদেশে যাবার প্রয়োজন হবে না বলে জানান আলোচকরা।

health2

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দ্রুত সময়ে স্ট্রোকের রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হলে অনেক মৃত্যু ঠেকানোর পাশাপাশি বিকালঙ্গ রোধ করা যাবে। স্ট্রোকের রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা জরুরি। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। খাবারে  লবণ না খাওয়া, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, স্ট্রেস না নেওয়া, ধূমপান না করার ওপর জোর দিতে হবে।’

স্ট্রোক রোধে মোবাইল ফোন কম ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করতে হবে। অধিক সময় মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকলে স্ট্রেস বেড়ে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দ্রব্যের সাশ্রয় করতে বলেছেন। তাই আমরা ওষুধের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় না করতে হয় সেদিকে সচেতন হতে হবে। এজন্য সকলকে রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এতে করে অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে।’

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রকিবুল ইসলাম পৃথক চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্ট্রোকের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

এতে বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, অধ্যাপক ডা. আইউব আনসারী, অধ্যাপক ডা. সুকৃতি দাস প্রমুখ।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর