সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেসব কারণে বিতর্কিত ডা. জাহাঙ্গীর কবির

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব কারণে বিতর্কিত ডা. জাহাঙ্গীর কবির
ডা. জাহাঙ্গীর কবির। ছবি: সংগৃহীত

ব্যতিক্রমী সব চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে ভাইরাল হওয়া ডা. জাহাঙ্গীর কবির সবারই পরিচিত একটি মুখ। ডায়াবেটিস, কিডনি ছাড়াও নানা রোগের ডায়েট চার্টের ব্যতিক্রমী সব পরামর্শ দিয়ে গত কয়েক বছর থেকেই স্বাস্থ্যখাতে আলোচনায় এই চিকিৎসক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচলিত ধারার বাইরের এমন চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের রয়েছে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার।

যদিও ইতোমধ্যেই কিটো ডায়েটের এই পরামর্শদাতার এমন কর্মকাণ্ডকে ‘অবৈজ্ঞানিক, অসত্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কাজ হিসেবে দেখছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ (এফডিএসআর)। সেই সঙ্গে তার এই কর্মকাণ্ডগুলো ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি।


বিজ্ঞাপন


১৯৯২ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০০ সালে স্নাতক পাস করা এই চিকিৎসকের ইউটিউব অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। যেখানে হরহামেশাই একজন ফ্যামিলি মেডিসিন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা এবং শ্বাস-রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইমারি কেয়ার রেসপিরেটরি গ্রুপ, বাংলাদেশের (আইপিসিআরজি) যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রয়েছে তিনি।

যেভাবে আলোচনায় আসেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির

করোনা মহামারিকালে ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই’ এমন শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও ইউটিউব দুই প্লাটফর্মেই এই ভিডিও সে সময় প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রায় দুই ঘণ্টার ওই ভিডিওর শেষদিকে ড. জাহাঙ্গীর কবির আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও ব্যাখ্যা দেন।

সে সময় ড. জাহাঙ্গীর কবিরের ওই আলোচনাটি ভ্যাকসিনবিরোধী ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের পক্ষে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধ্যানধারণাকে সমর্থন করায় বিপুলসংখ্যক ফলোয়ার ও অ্যান্টি-ভ্যাক্সিন চিন্তাধারার গোষ্ঠীর মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর সেই ভিডিওতে উপস্থাপিত ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্যগুলো বিভিন্ন মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে সমালোচিত হতে হয় এই চিকিৎসককে। যদিও পরবর্তীকালে সমালোচনার মুখে সেই ভিডিও ডিলিট করার পাশাপাশি নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে দাবি করেছিলেন- তার সেই ভিডিওটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আংশিক কেটে প্রচার করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে এবং তার সেই ভিডিওর উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করে কোভিড-১৯ এর আক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে না- এটা বোঝানো।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্স (১৭) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্র মারা যায়। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর খিদমাহ হাসপাতালে তার পিত্তথলি অপসারণে অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। অস্ত্রোপচারের পর জটিলতা দেখা দিলেও প্রিন্সকে জোর করে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবারের। পরে বাসায় ফেরার পর প্রিন্সের অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবারও ২১ ডিসেম্বর খিদমাহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্বজনদের অভিযোগ- প্রিন্স মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলেও ডা. জাহাঙ্গীর কবির ‘পাত্তা দেননি’।

এ ঘটনায় ‘অস্ত্রোপচারে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগ করেন কিশোরের বাবা আবুল কাশেম। সবশেষ গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্সের অস্ত্রোপচারে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানের নির্বাচিত সহযোগী অধ্যাপক বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেও রাখতে বলা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, গত আগস্টে ডা. জাহাঙ্গীর কবির চিকিৎসা পরামর্শকে ‘অবৈজ্ঞানিক, অসত্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হিসেবে দাবি করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিজ (এফডিএসআর)। এ নিয়ে ১ আগস্ট ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটির পক্ষে বলা হয়েছিল, ডা. জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট নিয়ে ভুল এবং অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই ডায়েটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো লিখিত বা মৌখিক কাউন্সিলিং করেন না। বরং ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগীদের ব্যাপকভাবে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিয়ে ক্ষতি করছেন। তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশনকে হেয় করে মন্তব্য করেছেন। করোনার টিকা নিয়ে ইম্যুনোলজিবিষয়ক ভুল বক্তব্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে, এমন সব অভিযোগের পর সম্প্রতি ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের চেম্বার ‘হেলথ রেভুলেশন’-এ অভিযানও চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সংস্থাটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির দায়ে তার পরিচালিত দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের ‘হেলথ রেভুলেশন’ নামে প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির অপরাধে ‘আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ’ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং অবৈধভাবে ওষুধ আমদানি করে সরবরাহ ও বাজারজাত করার অপরাধে ‘ইন-মোশন ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল’কে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর