শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চক্ষু হাসপাতালে চোখ ওঠা রোগীর ভিড়, কর্তৃপক্ষের দাবি কমছে 

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

চক্ষু হাসপাতালে চোখ ওঠা রোগীর ভিড়, কর্তৃপক্ষের দাবি কমছে 

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে কনজাংকটিভা বা চোখের প্রদাহ রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। যা সবার কাছে চোখ ওঠা রোগ নামে পরিচিত। একমাস পার হলেও রোগটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে এ ধরনের রোগীর চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ব্যতিক্রম নয় দেশের প্রধান চক্ষু প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।

হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতি ২০০ জন রোগীর অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন চোখ ওঠা সমস্যা নিয়ে আসছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি রোগীর সংখ্যা গতমাসের তুলনায় যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে।


বিজ্ঞাপন


হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে অপেক্ষমান রোগীদের অনেকের চোখেই দেখা গেছে কালো চশমা। চশমা ছাড়াও অনেক চোখ ওঠা রোগীকে দেখা গেছে। আবার কালো চশমা পরা সকলেই চোখ ওঠা রোগী তা-ও নয়, অনেকে সার্জারিসহ নানা চিকিৎসাগ্রহণের পর ফলোআপের জন্য এখানে এসেছেন। যে কোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা হিসেবে কালো চশমা ব্যবহার করছেন এসব রোগীরা। 

সম্প্রতি সরজমিনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চক্ষু হাসপাতালটি ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতালে আসা হায়দার আলী (ছদ্মনাম) এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি গত কয়েকদিন চোখ ওঠা সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমে চোখ লাল ও জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একইসঙ্গে চোখ ব্যথা দেখা যায়। এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে এই বিশ্বাসে চিকিৎসকের কাছে আসেননি। তবে ৩ থেকে ৪ দিনেও সেরে না ওঠায় হাসপাতালে এসেছেন।


বিজ্ঞাপন


তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। অনেকে ড্রপ ব্যবহারে উপকার না পেয়েও এসেছেন। আবু বকর নামে আরেক রোগী বলেন, ‘আমি চোখ ওঠার সমস্যা নিয়ে আসিনি। তিন দিন আগে চোখ ওঠেছিল। ফার্মেসি থেকে ড্রপ কিনে ব্যবহার করেছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আজকে চোখের মাংস বাড়ার সমস্যার জন্য দেখাতে এসেছি।’

তবে চিকিৎসক তাকে মাংস বাড়ার সার্জারির পাশাপাশি চোখ ওঠার সমস্যা রয়েছে জানিয়ে সতর্ক করে ওষুধ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রপ ব্যবহার না করতে পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

চোখ ওঠা রোগীর চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বার্হিবিভাগের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বহির্বিভাগে চোখ ওঠা রোগীর চাপ আছে। প্রতিদিন যদি ২০০ জন রোগী দেখি, তাহলে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন চোখে ওঠা রোগী পাচ্ছি। তাদের অনেকেই ফার্মেসি থেকে ড্রপ কিনে ব্যবহার করেছে। আমরা তাদের কোনো পরামর্শ ছাড়া এসব ড্রপ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি। একইসঙ্গে সবসময় কালো চশমা পড়তে, চোখে হাত ও পানি না লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি। প্রয়োজনে অনেককে ওষুধ সাজেস্ট করছি।’

রোগীর সংখ্যা কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দিনে ৪০ থেকে ৫০ জনের জায়গায় এখন ২৫ থেকে ৩০ জন পাচ্ছি। অর্থাৎ সংখ্যাটা কমছে, আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যে তা শূন্যে নেমে আসবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এটি বাতাস দ্বারা ছড়ানোর রোগ না। রোগটি স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই স্পর্শটা যদি রোধ করা যায় তাহলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে। চোখ ওঠা রোগী তার চোখে হাত লাগিয়ে বা যেই রোমাল ও ট্যিসু ব্যবহার করেছে তা যদি অন্য কেউ স্পর্শ করে সেই হাত চোখে লাগায় তাহলেই তা অন্যের কাছে ছড়ায়। অর্থাৎ সতর্কতা ও নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যেমন আমাদের বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখছেন। তবে তারা কিন্তু আক্রান্ত হচ্ছেন না। কারণ তারা সতর্কতা অবলম্বন করছেন।’

এ সময় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমছে বলেও জানান অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। ড্রপ ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওষুধ ব্যবহার করা ছাড়াও রোগীরা সুস্থ হতে পারে। অনেক সময় রোগীদের ফার্মেসি থেকে ড্রপ ব্যবহার করতে শোনা যায়। তারা যে ড্রপ ব্যবহার করছে, বরং তাতেই অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কী ড্রপ ব্যবহার করা উচিত দোকানদার কি তা জানে? আমাদের এখানে রোগীরা মাত্র ১০টাকায় চিকিৎসক দেখাতে পারছেন। সারাদেশের উপজেলা হাসপাতালেও চোখের চিকিৎসক আছেন। তারা সেখানেই চিকিৎসা নিতে পারেন।’

এমএইচ/এমএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর