রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

গরম ও থেমে থেমে বৃষ্টিতে বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশি

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

গরম ও থেমে থেমে বৃষ্টিতে বাড়ছে জ্বর-সর্দি-কাশি

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ক্রমেই বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাতিশীতোষ্ণ ছয় ঋতুর বাংলাদেশ ক্রমেই তার চিরচেনা চিত্র হারাতে বসেছে।

বর্ষাকালে মেঘলা আকাশ-বৃষ্টির পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে শরতের নীল আকাশ, জৈষ্ঠ্যের তাপদাহ। আর শরতে বর্ষার মতো বৃষ্টি ও তীব্র রোদ। প্রকৃতির এই বিরূপ পরিবর্তনে দেখা দিচ্ছে নানা রোগ বালাই। সাম্প্রতিক সময়ে তাপদাহ ও বৃষ্টিপাতের মিশ্র আচরণের ফলে জ্বর, সর্দি, কাশির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর রামপুরায় মামার বাসায় বেড়াতে এসেছেন হাসিব দিপু। ঢাকায় আসার রাতেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। সাথে সর্দি ও কাশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গত কয়েকমাস যাবত তীব্র গরম। এরমধ্যে আসার পথে কিছুটা বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। ফলে সেদিন রাত থেকেই জ্বর অনুভব করছি। পাশাপাশি সর্দি-কশি। এতে শরীর খুবই দুর্বল এবং খাবার রুচি নেই বললেই চলে।’

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা হামিদা বেগম বলেন, ‘গরম কমছে না। টানা গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বাচ্চারা ঘেমে একাকার হয়ে যায়। এদিকে বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথেই তারা ফ্যানের নিচে চলে যায়। অনেক সময় গোসল করতে চায়। সব সময় তো বাঁধা দিয়ে রাখা যায় না। গরমে বাচ্চারা অনেক বেশি ঠান্ডা পানি আর আইসক্রিম খাচ্ছে। এতে আমার বড় ছেলের প্রচণ্ড কাশি দেখা দিয়েছে আর অপর ছেলে দুইদিন যাবত জ্বরে ভুগছে। করোনা ডেঙ্গুর মধ্যে জ্বর অত্যন্ত ভয় পাইয়ে দেয়। তাই ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াচ্ছি। দুইজনই মোটামোটি ভালো আছে তবে সম্পূর্ণ সুস্থ না।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ
হাসিব ও হামিদা বেগমের মতো প্রায় প্রতি ঘরেই জ্বর সর্দির এ প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বর্ষার শেষ ও শরতের শুরুতে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক জানিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জ্বর ও সর্দির এ ধরনের প্রাদুর্ভাব প্রতিবছরই হয়, একটু কম বা বেশি। এটি অস্বাভাবিক নয়। এই সময়ে ভাইরাস ছড়ায় বেশি, পাশাপাশি ঠান্ডা গরমের সংমিশ্রণে জ্বর-সর্দি বেশি হয়। এটি হাঠাৎ তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে হয়। যেমন: কেউ একজন বাইরে গরম থেকে এসেই যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে তাহলে তার জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কেউ বাইরে থেকে এসেই এসি বাড়িয়ে ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করলে তারও এই ধরনের ঝুঁকি দেখা যায়। একইসঙ্গে সিজনাল ভাইরাসের প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সব সাধারণ জ্বর তা নয়। কিছু কোভিড ও ডেঙ্গুও থাকতে পারে।’


বিজ্ঞাপন


এসব রোগীদের করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জ্বরে আক্রান্তদের ডেঙ্গু ও করোনা পরীক্ষা করানোটা বাধ্যতামূলক বা অতি প্রয়োজনীয় বলা যাবে না। কারণ এখানে বেশিরভাগই সাধারণ জ্বর। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তিনি রোগীর অবস্থা বিবেচনায় পরামর্শ দিলে পরীক্ষা করাতে হবে।’

ওষুধ খেলে সাত দিন, না খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবেন!
রোগীদের করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে রোগীকে সিমটমেটিক চিকিৎসা নিতে হবে। রোগীরা প্যারসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।

এছাড়া মজা করে অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমরা বলি, ওষুধ খেলে সাত দিন, না খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবেন! তবে রোগীদের অধিক পানি খেতে হবে। এতে সুস্থ হওয়ার পর শারীরিক দুর্বলতাটা তাড়াতাড়ি কেটে যাবে। কারণ অনেকের ভালো হওয়ার পরেও দুর্বলতাটা থেকে যায়। ফলে যারা পর্যাপ্ত পানি ও খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে পারবে তারা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।’

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর