শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে বছরে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ডায়াবেটিস রোধ করা গেলে বছরে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব’
ছবি: ঢাকা মেইল

দেশে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা গেলে এর পেছনে ব্যয় হওয়া অর্থ দিয়ে বছরে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ব্লকে প্রিভেনশন অব ডায়াবেটিস মেলাইটাস (ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ) নিয়ে আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে এ কথা বলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ টেস্টের মাধ্যমে দেশের মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারে, তবে দেশে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের ডায়াবেটিসের আগাম ও পরবর্তী পর্যায় যদি প্রকাশ করা যায়, তবে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণায় আরও অগ্রগতি ও উন্নতি করে ইতিহাস হতে চায়। ইতোমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। কি হয়নি?- এসব বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। যৌথভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট তৈরি করা হয়েছে।’

এ দিন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের অনারারি প্রফেসর ডা. মধু এস মালো। এ সময় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলাম। আমি কিছু মাউস বা ইঁদুর মডেল নিয়ে কাজ করেছি। যে মাউস মডেলগুলোতে একটি এনজাইম কম ছিল। এর নাম ইন্টেস্টাইনাল এলকালাইন ফসফেটেজ। ইন্টেস্টাইনাল এলকালাইন ফসফেটজের কাজ হচ্ছে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনকে ধ্বংস করা। এই টক্সিনগুলো যদি রক্তে যায় তবে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ যদি প্যানক্রিয়াসের বিটাসেলে আক্রান্ত হয়, এটি টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস। আর প্রদাহ যদি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় তবে তা হচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিস।’


বিজ্ঞাপন


বিএসএমএমইউর এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি যে মাউসগুলোর কথা বলছিলাম তাদের ইন্টেস্টাইনাল এলকালাইন ফসফেটেজ ছিল না। তখন আমার থিউরি হলো- এই মাউসগুলো টক্সিনকে ধ্বংস করতে পারবে না। এদের ডায়াবেটিস হওয়া উচিত। এদের পরীক্ষা করে দেখতে পেলাম, এদের ডায়াবেটিস আছে। এদের কোলেস্টেরল লেভেল হাই, ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল হাই, এইচডিএল লো, এলডিএল লেভেল হাই। এদের লিভার ডেমেজও হয়ে গেছে।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এনিম্যাল স্টাডির পর হার্ভার্ড থেকে চলে আসি। এখানে হিউম্যান স্টাডি শুরু করি। হিউম্যান স্টাডিতে যাবার আগে আমার মনে হলো ডায়াবেটিস আক্রান্ত ইঁদুরে যদি ইনজামইম কম থাকে, তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষেরও এই এনজাইম কম থাকে। পরীক্ষা করে এর সত্যতা পেলাম। যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের ওই এনজাইমও প্রায় ৫০ শতাংশ কম। এ তথ্য পাবার পর আমার থিউরি হলো যে- এই আইপি এনজাইম ডিফিসিয়েন্সি সম্ভবত ডায়াবেটিস তৈরি করছে। এটিই ডায়াবেটিস রোগের কারণ।’

প্রফেসর ডা. মধু এস মালো বলেন, ‘তখন আমি দুটো গ্রুপকে নিলাম। এক গ্রুপের আইপি এনজাইম বেশি এবং অন্য গ্রুপে আইপি এনজাইম কম। এদের আমি পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণ করি। পর্যবেক্ষণে দেখলাম যাদের আইপি এনজাইম কম তাদের ১৪ গুণ বেশি ডায়াবেটিস হচ্ছে। এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে টেস্ট ডেভলপ করেছি। যার নাম স্টুল এলকালাইন ফসফেট টেস্ট। এই এনজাইমটা স্টুলে পাওয়া যায়। এই এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজের পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস বের করতে পারি। কারও স্টুলে স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ কম থাকলে তাদের ডায়াবেটিস বেশি।’

সিম্পোজিয়ামে অন্যান্য আলোচকরা জানান, ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী বড় একটি সমস্যা। প্রায় ৪৬ কোটির বেশি লোক এই রোগে ভুগেন। আরও প্রায় ৪৬ কোটি লোক প্রি ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। এছাড়া বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন লোক অর্থাৎ ২০ কোটি লোক এখনও আনডায়াগনোজড হিসেবে রয়ে গেছেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ। পাশাপাশি প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগছেন এক কোটি ৭০ লাখ লোক। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার ডায়াবেটিসের পেছনে ৮৬২ ডলার খরচ করে

গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা জানান, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাণির শরীরের আইপি এনজাইম কম হলে ডায়াবেটিস হয়। মানুষের এই আইপি এনজাইম স্টুল এলকালাইন ফসফেটেজ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা যাবে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর