বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হবেন রক্তনালী ব্লক রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০২২, ০২:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হবেন রক্তনালী ব্লক রোগীরা

রক্তনালির বিভিন্ন রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষত গ্যাংরিনের মতো রক্তনালির ব্লকের কারণে অঙ্গহানি ঘটে থাকে। পচনশীল ক্ষত বা গ্যাংরিন একটি গুরুতর ও প্রাণঘাতী অসুস্থতা। সারাবিশ্বে অনেক মানুষ মারাত্মক এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পা-সহ একাধিক অঙ্গ হারায়। আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে অত্যন্ত ভোগান্তির সাথে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

রক্ত সরবরাহের অভাবে দেহের কোনো অঙ্গের কলার মৃত্যু হলে রক্তনালীতে ব্লক দেখা দেয়। কোন আঘাত বা সংক্রমণের ফলে অথবা রক্ত সঞ্চালনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভোগার ফলে এটি হতে পারে। পচনশীল ক্ষতের প্রাথমিক কারণে দেহ কলাতে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, যার ফলে কোষের মৃত্যু ঘটে। ডায়াবেটিস ও দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান পচনশীল ক্ষতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা ।


বিজ্ঞাপন


তবে বর্তমানে স্টেমসেল ও প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির মাধ্যমে কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে ভাসকুলার বিভাগের উদ্যোগে রক্তনালি রোগের চিকিৎসা বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য নিয়ে ‘আপডেট অব ভাসকুলার সার্জারি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, রক্তনালির রোগগুলোর কারণে মানুষের অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেমন: রক্তনালির ব্লকের কারণে পায়ের গ্যাংরিন হয় এবং এতে অপারেশনের মাধ্যমের তা কাটতে হয়। তবে বিএসএমএমইউর ভাসকুলার বিভাগে চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই তাদের অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব। স্টেমসেল থেরাপি ও প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির মাধ্যমে নতুন রক্তনালি তৈরি করে বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করে রোগীদের পঙ্গুত্ববরণ করা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসায় লেজার থেকে শুরু করে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে এ বিভাগে।

একইসঙ্গে আঁকাবাঁকা শিরা না কেটে আরএফএর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবাও শিগগিরই চালু হবে বলে জানিয়েছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


আলোচকরা বলেন, দেশে একমাত্র ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষায়িত এমএস কোর্স বিএসএমএমইউতে চালু আছে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াও গত দুই বছরে ছয়জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভাসকুলার সার্জন তৈরি করে এই বিভাগ। ভাসকুলার সার্জারি রোগীদের অপারেশন করার জন্য বিভাগটিতে আছে সুসজ্জিত অপারেশন থিয়েটার। বিভিন্ন সময়ে গাইনি ও সার্জারি বিভাগের বিভিন্ন অপারেশনেও ভাসকুলার সার্জনদের অংশগ্রহণ করেন।

বিভাগটিতে রক্তনালি ব্লক, এনিউরিজম, ডিভিটি, টিউমার, মেলফরমেশন ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা চালু আছে। 
একইসঙ্গে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য নিয়মিতভাবে ফিস্টুলা ভেনাসজনিত পায়ের আলসার, ফোর লেয়ার ব্যান্ডেজের মাধ্যমে ক্ষত দূরসহ বিভিন্ন সেবা চালু রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের আধুনিক ডুপ্লেক্স স্ক্যান ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন রোগী পরীক্ষা করতে পারছেন বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, এর চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো এখনও রিসার্চ লেভেলে সারাবিশ্বেই চলছে, আমরাও শুরু করেছি। স্টেমসেল পদ্ধতিতে কিছু ইঞ্জেকশন দিয়ে রোগীর রক্তকনিকার সংখ্যা বাড়ানো হয়। কনিকা বাড়িয়ে তা আবার রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। এতে রোগীর নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপিও নতুন রক্তনালী তৈরিতে সাহায্য করে।  প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির তুলনায় স্টেমসেল পদ্ধতি অধিক ভালো। তবে স্টেমসেল থেরাপির জন্য টেকনোলজিটা অধিক আধুনিক এবং এতে খরচের পরিমাণও বেশি। এটি করতে রোগী প্রতি দুই লাখ খরচ হয়। এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব রোগীরা এই খরচ বহন করতে পারেন না। অপরদিকে প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগীকে একাধিকবার এই থেরাপি নিতে হয়। আট থেকে দশবার মিলিয়ে রোগীর এই খরচটি হয়।’ 

দেশে এই পদ্ধতির শুরু বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপিটি আমরা গত দুইবছর যাবত পরিচালনা করছি। আর স্টেমসেলটা তিনমাস আগে শুরু করেছি।তবে বিএসএমএমইউতে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে তা শুরু করেছি। এর আগে আমরা বেসরকারি পর্যায়ে এটি করছি। সেখানে আমরা ফলাফল ভালো লক্ষ্য করেছি।’

গ্যাংরিন ও রক্তনালীতে কত মানুষ আক্রান্ত এর জাবাবে এই বিশেষজ্ঞ সার্জন বলেন, ‘ঠিক কত শতাংশ মানুষ এধরনের সমস্যায় ভুগছে তার সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই। এ সংক্রান্ত কোনো জরিপ করা হয়নি। সাধরণত চার ধরনের মানুষের মানুষের রক্তনালীতে ব্লক ধরা পরে। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল এবং ধুমাপায়ীরা অধিক আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে গ্যাংরিনে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং তারা সাধারণত দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভোগে থাকেন।’

এদিকে ‘আপডেট অব ভাসকুলার সার্জারি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গড়ে তুলছে, যাতে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেওয়া সম্ভব হয়। কোনো রোগীকে যেন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়। যেসকল বিষয়ে এর আগে খুব একটা উন্নতি হয়নি, সেসকল বিষয়ের উন্নয়নে আধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেমন প্লাস্টিক ও ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’ 

এ সময় ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।

এমএইচ/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর