সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধের পরামর্শ 

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২২, ০৬:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধের পরামর্শ 

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ উল্লেখ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ লক্ষ্যে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লকের অডিটরিয়ামে 'থ্যালাসেমিয়া এন ইমার্জিং ন্যাশনাল হেলথ ইস্যু: ওয়ে টু মিনিফাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


তারা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা প্রায় ৬ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার নতুন শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগের জীনসহ জন্মগ্রহণ করছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী অন্যটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক।

যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী তাদেরকে প্রতি মাসেই এক দুই বার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারাজীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। তাদের অনেকেই বিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করে চিকিৎসা করা হলে এদের সুস্থ করার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন একটি জটিল, ব্যয় বহুল এবং অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থা। 

থ্যালাসেমিয়া বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিয়ে করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন সুস্থ ব্যক্তিকে বিয়ে করেন তবে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। কাজেই সমাজের সর্বস্তরে এই রোগের ব্যাপকতা এবং একজন বাহক যাতে অন্য বাহককে বিয়ে না করেন, একজন নেগেটিভ ব্যক্তিকে বিয়ে করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মুভমেন্ট ফর থ্যালাসেমিয়া ইরেডিকেশন ইন বাংলাদেশ (এমটিইবি) নামক একটি সামাজিক সংগঠন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুক্তভোগী শিশু ও তার পরিবারের করুণ গাঁথা 'রক্তিম সাহারার আত্মকথা' যা অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় এ রোগের ভয়াবহতা বর্ণনার পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে তোলে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্মিলিত জ্ঞান, কর্মদক্ষতা আমাদের আরও সমৃদ্ধশালী ও সমযয়োপযোগী করবে যা একটি সুস্থ সুন্দর ও উন্নত জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি।'

'রক্তিম সাহারার আত্মকথা' বয়ানে ও থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে এমটিইবি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে 'রক্তিম সাহারার আত্মকথা' প্রকাশের মাধ্যমে দেশের ঘরে ঘরে থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে সচেতনতা জাগ্রত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

এ সময় থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ আন্দোলনের সফলতা কামনা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনর্বাসন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, 'দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এটি আশঙ্কাজনক। আমরা যদি বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে পারি তাহলেই দেশ থেকে রোগ নির্মূল করা সম্ভব। এর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। প্রয়োজনে বিয়েতে থ্যালাসেমিয়া সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ আইন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং রোগী ও পরিবারের জন্য কষ্টদায়ক। আমরা আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পেতে পারি।' 

এসময় দেশের স্বাভাবিক সময়ের স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীগণ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ডা. এনামুর রহমান।

সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে কাজী অফিসে বিয়ে পড়ানোর আগে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এটি নিশ্চিতে আইন পাস করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। শুধু তাই নয়, একটি সুস্থ, কর্মঠ জাতি বিনির্মাণে তারা থ্যালাসেমিয়া নামক এই বংশগত দুরারোগ্য ব্যাধির নির্মূলে কাজ করছে।

এমএইচ/এমএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর