রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এপিআই নীতি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি নজরদারির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

এপিআই নীতি বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি নজরদারির আহ্বান

বাংলাদেশের ওষুধশিল্পকে কৌশলগতভাবে রূপান্তর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য–নিরাপত্তা জোরদার করতে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) নীতি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে এই নীতিকে ‘জাতীয় স্বার্থে শীর্ষ অগ্রাধিকার’ হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


চিঠিতে স্বাক্ষর করেন এএইচআরবির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন।

আমদানিনির্ভরতা ও ঝুঁকি

চিঠিতে বলা হয়, দেশে এখন প্রায় সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হলেও এপিআইয়ের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলেই ঝুঁকিতে পড়ে উৎপাদনব্যবস্থা ও জাতীয় স্বাস্থ্য–নিরাপত্তা। করোনাকালে এই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, এপিআই, ভ্যাকসিন, আইভিডি এবং চিকিৎসা–সরঞ্জাম উৎপাদনে দ্রুত দেশীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা উন্নয়নে (আর অ্যান্ড ডি) বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, প্রণোদনা দেওয়া এবং উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পর ধাপে ধাপে আমদানি সীমিত করা।চিঠিতে ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি বাস্তবায়নকে ‘ঐতিহাসিক সফলতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গীকার, কঠোর তদারকি ও শক্ত নেতৃত্ব সেই সময় ওষুধশিল্পে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। যা নির্দশনস্বরূপ দেখায়, বড় নীতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ পর্যায়ের দৃঢ় নেতৃত্ব অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্ঞানভিত্তিক শিল্পে রূপান্তর না ঘটলে দেশের ট্যাক্স–জিডিপি অনুপাত ৭ শতাংশের নিচে থাকবেই। ফার্মাসিউটিক্যাল খাত এই রূপান্তরের বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে। ভারতে যেখানে মোট রফতানির ৫ শতাংশ আসে ওষুধশিল্প থেকে, বাংলাদেশে তা এখনও মাত্র ০.৫ শতাংশ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোয়েল মকিয়েরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘জ্ঞানই আধুনিক অর্থনীতির প্রধান চালক— তাই এই খাতকে টেকসই জ্ঞানভিত্তিক শিল্পে রূপান্তর জরুরি।’


বিজ্ঞাপন


পাঁচটি জরুরি পূর্বশর্ত

এপিআই নীতি বাস্তবায়নে জরুরি পাঁচটি পদক্ষেপ উল্লেখ করা হয়েছে—

১. প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত বাধা দূর করা;

২. আকর্ষণীয় প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম চালু করা;

৩. আর অ্যান্ড ডি–তে ধারাবাহিক সরকারি অনুদান;

৪. অ্যাকাডেমিয়া–ইন্ডাস্ট্রি সহযোগিতা জোরদার করা;

৫. নির্দিষ্ট সময়সীমায় বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন।

চিঠিতে বলা হয়, এসব নীতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে এগোবে না; এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও দ্রুত তদারকি প্রয়োজন।

প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার সরাসরি নজরদারি নিশ্চিত হলে—

  •  এপিআই নীতি কাগুজে অবস্থায় আটকে থাকবে না;
  • আমদানি নির্ভরতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে;
  • রফতানি বাড়বে, দশকের মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত হবে;
  • দক্ষ কর্মসংস্থান বাড়বে, ট্যাক্স–জিডিপি অনুপাতও উন্নত হবে।

চিঠিতে বলা হয়, এটি কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়— বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা, সক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য–নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কৌশলগত রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার।

এসএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর