শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সংবাদ পরিবেশনা বাড়াচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২২, ০৯:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

সংবাদ পরিবেশনা বাড়াচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতা!

দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এ অবস্থায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নয়তো সংবাদের কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন তারা।

রোববার (৩ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত ‘রেসপন্সিবল রিপোর্টিং অন সুইসাইড’ শীর্ষক কর্মশালায় আলোচকরা এই আহ্বান জানান।


বিজ্ঞাপন


‘আত্মহত্যার সংবাদ: কেমন হওয়া উচিত’ এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ‘পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা’ বা এ ধরনের শিরোনাম পরের বছরে পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার উপায় বলে দেয়। কারণ এই সংবাদের শিরোনামেই পরীক্ষায় ফেল করলে কী করতে হবে, সেটির একটি বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদটিতে আত্মহত্যার ঘটনায় সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে আত্মহত্যাকারীকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ‘নায়কোচিত’ ভূমিকায় রূপান্তর করা হয়। আত্মহত্যা করলে ‘মৃত আমি’ অনেক সহমর্মিতা পাবো যা অনেকটা সামাজিক ন্যায়বিচারের বিকল্প হবে। এই বোধে ঘটতে পারে নতুন আত্মহত্যা।

আত্মহত্যা রোধে মিডিয়ার অনেক ভূমিকা রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার সংবাদটি প্রথম পৃষ্ঠায় বা খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকাশ করা যাবে না। শিরোনামে এমন কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয় যা পাঠক বা দর্শককে উদ্দীপনার খোরাক হয়। আবার এমনভাবেও প্রকাশ করা যাবে না যে আত্মহত্যা একটি স্বাভাবিক মৃত্যুমাত্র। যেমন- ‘অপমান সইতে না পেরে রেললাইনে মাথা পেতে দিলো অমুক’ বা ‘অভিমান করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অমুক’ ইত্যাদি আলংকারিক বাক্য না ব্যবহার করে শুধু সংক্ষিপ্ত শিরোনাম দেওয়া উচিত, যেমন: ‘অমুকের আত্মহত্যা’।

সুইসাইড স্পট তৈরি করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার স্থান নিয়ে যেন কোনো সংবাদ না থাকে। এক্ষেত্রে স্থানটিকে নিরাপদ রাখতে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে জানানো যেতে পারে। যেমন, কোনো বিশেষ উঁচু স্থান, বিশেষ পুকুর ইত্যাদিতে প্রায়ই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বলে প্রচার মাধ্যমে সাধারণের জন্য সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না।’

সেলিব্রেটিদের আত্মহত্যার খবরে অধিকতর সতর্কতা প্রয়োজন জানিয়ে  হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষ কীভাবে জীবনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, এমন ফিচার ও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে সেলিব্রেটি বা আলোচিত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের সময় অধিকতর সতর্ক হতে হবে। কারণ অধিকাংশ সময় মানুষ সেলিব্রেটিদের অনুসরণ করে থাকেন।’


বিজ্ঞাপন


এ সময় আত্মহত্যার সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনকারী সংবাদকর্মী নিজেও আত্মহত্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন জানিয়ে প্রয়োজনে তাকেও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে হতে পারে জানান এই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডি শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবিশ্বেই আত্মহত্যা বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে মিডিয়াগুলো বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আত্মহত্যার খবর প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পলিসি হলো শিরোনামে 'আত্মহত্যা' শব্দটি পরিহার করা। এটি হয়তো আমাদের গণমাধ্যমে হঠাৎ করেই সম্ভব না। তবে, ধীরে ধীরে সেটি কমিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, দেশে আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগই ২১-৩০ বছর বয়সী তরুণ। তাদের একটা বড় অংশ আবার শিক্ষার্থী। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সারা বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ২৫৬টি। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার। ২০১৯ সালে সারা বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আর ২০২০ সালে সেই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৩৬টি।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর