মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিম্নআয়ের দেশে ক্যানসার আক্রান্ত ১০ জনের ৯ জনই চিকিৎসাবঞ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

নিম্নআয়ের দেশে ক্যানসার আক্রান্ত ১০ জনের ৯ জনই চিকিৎসাবঞ্চিত

নিম্নআয়ের দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দশ জনের মধ্যে নয় জনই চিকিৎসাবঞ্চিত বলে জানিয়েছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর রেডিসন হোটেলে অনকোলজি ক্লাব বাংলাদেশের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার সম্মেলন ২০২৫’ এর সমাপনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।


বিজ্ঞাপন


এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এম সাইফুল হক, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. এফ এম কামাল উদ্দিন ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০২০ সালে ১ কোটি মানুষ মারা গেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকিতে। নিম্নআয়ের দেশে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই চিকিৎসা পান না। উচ্চ আয়ের দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার মেশিন রয়েছে। কিন্তু নিম্নআয়ের ৫৬ মিলিয়ন মানুষের জন্য একটা মেশিন রয়েছে। বাংলাদেশে রেডিওথেরাপির মেশিন রয়েছে ঢাকা কেন্দ্রিক।

এ সময় ডা. এফ এম কামাল উদ্দিন বলেন, প্রতি আটজন মহিলার মধ্যে একজনের ব্রেস্ট ক্যান্সার হচ্ছে। ক্যান্সার একটা মহামারীর মতো। ক্যান্সার সংক্রামক রোগ নয়, তবে সংখ্যার দিক দিয়ে মহামারী। মহামারী সাময়িক সময় থাকার পর চলে যায়, কিন্তু ক্যান্সার কখনও চলে যায় না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যান্সার আক্রান্ত হলেই মৃত্যু। আর উন্নত দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও মানুষ বেঁচে যায়।


বিজ্ঞাপন


ডা. এফ এম কামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে নগদ টাকা চিকিৎসা করবে, তাও পাওয়া যায় না। ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হয় রেডিওথেরাপির জন্য। যত মানুষ ক্যান্সার হয় সেই হিসাবে প্রতি ৪৫০ জনের জন্য একটি মেশিন প্রয়োজন। বাংলাদেশে ১ লাখ ৮৪ হাজার ক্যান্সার রোগী রয়েছে। ২০৯টি মেশিন প্রয়োজন; অথচ আছে মাত্র ২৯টি মেশিন।

তিনি আরও বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী সব সরকারি চাকরিজীবীকে কোলনস্কপি বাধ্যতামূলক করা উচিত। সেইসঙ্গে ৫০ এর বেশি বয়সী সবাইকে কোলনস্কপি করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে; প্রয়োজনে আইন করা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. এম সাইফুল হক বলেন, দ্রুত শনাক্ত এবং স্ক্রিনিংয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে বাড়াতে হবে সচেতনতা। স্কুল পর্যায়ে স্ক্রিনিং এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা পলিসি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল প্রয়োজন। রেডিওথেরাপির একটা  মেশিন কিনতে ৩-৪ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। মেশিনটি চালাতে পারবে ১০ বছর। মানুষ কেন এই সেক্টরে ইনভেস্ট করবে, সেই বিষয়টিও দেখতে হবে। সরকারেরও ব্যাপক পরিসরে এগিয়ে আসা উচিত। ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।

ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশ এগিয়েছে। আরও উন্নত করা প্রয়োজন। চিকিৎসায় নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার নির্ণয়ে ভুল হয় সারাবিশ্বে, বাংলাদেশেও হয়। তবে বাংলাদেশে দেখা হয় বড় করে। চিকিৎসকদের ভালো দিকটাও প্রচার হওয়া প্রয়োজন।

এই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে ক্যান্সারের ওষুধের দাম কম হওয়ার কারণ ভারত নিজস্ব কাঁচামালে ওষুধ উৎপাদন করে। আর বাংলাদেশে বিদেশি ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়।

ক্যান্সার সম্মেলন সম্পর্কে তিনি জানান, ১২ বছর ধরে এই সম্মেলন হচ্ছে। ২৯টি দেশ থেকে বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হয়েছেন এবং নানা আলোচনা করেছেন। প্রয়োজন ৬ হাজার বিশেষ অংশগ্রহণ করেছেন।

এসএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর