প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সবসময়ই সেবা পৌঁছানো কঠিন। তবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। সেই সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালে রূপান্তরের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবের বিএসএফ কনভেনশন হলে ডিজিটাল হেলথকেয়ার ইকোসিস্টেম ‘হেলথ বন্ধুর’ উদ্বোধনকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটেছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালসহ আধুনিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। হঠাৎ অসুস্থ হলে রোগীর স্বজনরা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে বা তাদের করণীয় কী, তা নির্ধারণ করতে পারেন না। রোগীকে দ্রুত সময়ে কোথায় নেওয়া যেতে পারে সেটি ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। নতুন ডিজিটাল হেলথকেয়ার সিস্টেম হেলথ বন্ধু সেই ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা- সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। কিন্তু সেটি ভুল। করোনা মহামারির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু হয়েছে, যেটা অন্য সময়ে হয়তো এত দ্রুত হতো না। এই সময়ে আমাদের সক্ষমতা জানান দেওয়া গেছে। আমরা একদিনে এক কোটি ২০ লাখ টিকা দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের সক্ষমতার জানান দিয়েছি।’
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল ও বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এরকম সুন্দর সিস্টেম বিশ্বের কোথাও নেই। কিন্তু আমাদের ব্যবস্থাপনায় নানা জটিলতা থাকায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে। বর্তমানে অনেক হাসপাতাল ডিজিটাল মাধ্যমে চলে এসেছে। হেলথ বন্ধু যেটা করতে চাচ্ছে- এটি অত্যন্ত ভালো একটা উদ্যোগ। এর মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেটিও দেখতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনার সময়ে টেলিমেডিসিন সেবা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হারে হারে টের পেয়েছি আমরা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের যে প্রত্যাশা, তা এখনও পূরণ হয়নি। মানুষের অসন্তুষ্টি রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় বিড়ম্বনা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর বহু দেশে আছে। স্বাস্থ্যসেবা যেভাবে চলছে তাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেবা পৌঁছাচ্ছে না। তাই ডিজিটাল এই সিস্টেমে যদি তাদের মাঝে সেবা পৌঁছানো যায়, তাহলেই সার্থক।’
দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ডাক্তার-নার্স ও সেবা পাওয়া নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও উন্নতি যে হয়নি তা কিন্তু নয়। এগিয়েছে বলেই বর্তমানে গড় আয়ু বেড়েছে, মা-শিশু মৃত্যুহার কমেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের ভালো কাজগুলোর তুলনায় দু-একটি খারাপ কাজেরই প্রচার বেশি হয়।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় বড় দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ব্রাজিল-ভারতে লাখ লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছে। সেসব দেশে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত। সেখানে আমাদের আক্রান্ত মৃত্যু দুইটাই অনেক কম। পৃথিবীর ১২১টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান পঞ্চম, এশিয়ায় প্রথম। তবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
এমএইচ/আইএইচ
