সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘মানবিক চিকিৎসক’ গড়তে ভর্তি পরীক্ষায় নতুন ধারা যুক্তের পরিকল্পনা

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘মানবিক চিকিৎসক’ গড়তে ভর্তি পরীক্ষায় নতুন ধারা যুক্তের পরিকল্পনা

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা ও মানবিক গুণাবলী যাচাইয়ের চিন্তা করছে সরকার। এই লক্ষ্য নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার নতুন রূপরেখা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

বর্তমানে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় ভালো করতে পারলেই শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তবে এতে মানবিক গুণাবলী বা সৃজনশীল চিন্তাশক্তি যথাযথভাবে মূল্যায়ন হয় না বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি কলেজে ৬ হাজার ২৯৩টি। সরকারি-বেসরকারির বাইরে রয়েছে একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ।

ভর্তি পরীক্ষায় আসছে ভিন্নতা

গৎবাঁধা নিয়ম থেকে বের হয়ে এবার ভর্তি পরীক্ষায় সৃজনশীলতা ও উপস্থিত বুদ্ধির মূল্যায়ন যুক্ত করার চিন্তা চলছে। শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলীও যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যাতে তারা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হিসেবে আরও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে পারেন।

বর্তমান পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে ২০, রসায়নে ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হয়। ৪০ নম্বরের নিচে পেলে কোনো শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচিত হন।


বিজ্ঞাপন


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ বছরও এমবিবিএসের পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতেই হবে। তবে বুদ্ধিমত্তা ও মানবিক গুণাবলী যাচাইয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা ওএমআর শিটেই মূল্যায়ন করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বর্তমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ক্ষমতা ও মানবিক গুণাবলী সেভাবে যাচাই করা যায় না। পাঠ্যবই যেসব শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেন এবং মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী তারা সুযোগ পাচ্ছেন। আবার অনেকেই এমবিবিএস পড়াশোনা শেষ করার পর চিকিৎসা পেশায় নিয়মিত হচ্ছেন না। একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর পেছনে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা মেডিকেলে পড়াশোনা করার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তাদের অবশ্যই চিন্তাভাবনা করা উচিত চিকিৎসক হওয়ার পর এই পেশায় থাকবেন ‍কি না। চিকিৎসা পেশায় আসতে হলে অবশ্যই তাদের মানবিক ও ভালো মানুষ হতে হবে। কারণ চিকিৎসকের একটু অবহেলাতেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলী, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা যাচাইয়ের চিন্তা চলছে। ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য বছরের মতোই থাকবে, তবে কিছুটা ভিন্নতা আনা হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকার ভাবছে এবং কাজ করছে।’

এ বিষয়ে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এমবিবিএসের ভর্তি পরীক্ষায় কিছুটা ভিন্নতা আনা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। বাকি বিষয় খুব দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি আগের আদলেই হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানবিক গুনাবলী যাচাইয়ের জন্য প্রশ্নে কিছু বিষয় সংযোজন হতে পারে। এটি করবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।’

ভর্তি পরীক্ষা ১২ ডিসেম্বর

আগামী ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আবেদন ও অন্যান্য বিষয় শিগগিরই জানানো হবে।

এসএএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর