শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

দেশে চোখের ছানি রোগীর সংখ্যা ৫ লাখের বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২, ০৬:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশে চোখের ছানি রোগীর সংখ্যা ৫ লাখের বেশি
ছবি: ঢাকা মেইল

সারাদেশে পাঁচ লাখের বেশি চোখের ছানি রোগী রয়েছে, যাদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার বাইরে থাকেন। এমতাবস্থায় দেশ থেকে ছানি-অন্ধত্ব দূর করতে ও ছানি প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (২৯ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


ছানি সচেতনতার মাস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে ছানি রোগের প্রেক্ষাপট: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্লেকটিভ সার্জনস (বিএসসিআরএস)।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ২০৩২ সালের মধ্যে দেশে তিন হাজার ২০০ চক্ষু চিকিৎসক প্রয়োজন হবে।

দেশে আরও চক্ষু চিকিৎসক প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্যখাতে জনবল ও দক্ষ জনবল খুবই কম। এই সংকট কমাতে হবে। চিকিৎসক কোর্সে ছাত্র বাড়াতে হবে। শুধু চক্ষু চিকিৎসক নয়, তাদের সার্জারিও জানতে হবে। ২০৩২ সালের মধ্যে তিন হাজার ২০০ জন চক্ষু চিকিৎসকের প্রয়োজন পড়বে। এখন আছে মাত্র এক হাজার ৪০০ জন। আগামী বছরগুলোতে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।’


বিজ্ঞাপন


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ছানি পড়া নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। দিনদিন তাদের চোখের জটিলতা বাড়লেও হাসপাতালে রোগী কম আসে। বেশকিছু এনজিও তাদের নিয়ে কাজ করছে। এনজিওগুলো নিজ খরচে বাসা থেকে গিয়ে রোগীদের নিয়ে আসছে, এমনকি সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করে দিচ্ছে। এদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা, পরীক্ষা, ওষুধসহ সব বিনামূল্যে হওয়ার পরেও রোগীরা আসছেন না।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাদের কায়িক শ্রম কমে গেছে, আগে মানুষ প্রচুর পরিশ্রম করতো। তাই রোগবালাই বেশি হচ্ছে। অনেকেই জানেন না- তারা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। অনেকের ডায়াবেটিস ১৮ থাকলেও তারা মিষ্টি খাচ্ছে, কোমল পানীয় খাচ্ছে। কারণ, সে জানেও না যে সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। তাহলেই যার যেই রোগ সেটি ধরা পড়বে। চিকিৎসার মাধ্যমে আবার সুস্থও হয়ে যায়। কিন্তু তারা চিকিৎসকের কাছে এমন একটা সময়ে আসে, যখন অনেকক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না।’

আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, ‘আমরা যেভাবে টেলিভিশন-মোবাইল-কম্পিউটার দেখি, এতে করে আমাদের চোখের খুবই ক্ষতি হয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই ব্যাপারটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তারা বইয়ের চেয়ে মোবাইল-ফোন দেখতে বেশি পছন্দ করে। এভাবে চলতে থাকলে তো শুধু চোখে না, শারীরিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সভায় অন্যদের মধ্যে বিএসসিআরএসের বৈজ্ঞানিক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে পাঁচ লাখের বেশি ছানি রোগী রয়েছে। প্রতিবছর নতুন করে এক লাখ ৩০ হাজার রোগী যোগ হচ্ছে। এসব রোগীদের মধ্যে এক লাখ সেবা পাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ ছানি সার্জনের অভাবে সকল রোগীদের চিকিৎসকের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ছানি রোগীর ৮০ ভাগই গ্রামে বসবাস করেন। মাত্র কয়েক মিনিটেই চোখের ছানি অপারেশন করা সম্ভব। এতে কোনো প্রকার ব্যথা নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

BSMMU

সভায় অন্য আলোচকরা বলেন, চোখের ছানিজনিত অন্ধত্ব সারা বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য রোগের মধ্যে একটি। ছানিজনিত অন্ধত্ব এবং এটি প্রতিরোধে সারাবিশ্বে সচেতনতা বাড়াতে জুন মাসকে ছানি সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের ছানি রোগীদের মধ্যে ৮০ ভাগই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে থাকেন। তাদের সিংহভাগই চিকিৎসার আওতায় বাইরে থেকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশ থেকে ছানি-অন্ধত্ব দূর করতে ও ছানি সমস্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এ দিন সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসসিআরএসের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাক আহমেদ। এছাড়া বিএসসিআরএস’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফর খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহীন আকতার, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারেক রেজা আলী প্রমুখ অংশ নেন।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর