রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ৮১ শতাংশ নবজাতকের শরীরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ৮১ শতাংশ নবজাতকের শরীরে
মহাখালী ক্যাম্পাসের সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলা: আর্চ গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক সেমিনার

বাংলাদেশে নবজাতকের শরীরে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি হওয়া নবজাতকের ৮১ শতাংশের শরীরে কার্বাপেনেম প্রতিরোধী ক্ল্যাবসিয়েলা নিউমোনির (সিআর-কেপিএন) জীবাণু মিলছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি অগ্রাধিকার প্যাথোজেন হিসেবে চিহ্নিত।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে কার্বাপেনেম অত্যন্ত কার্যকরী। আর কার্বাপেনেম প্রতিরোধী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনি (সিআর-কেপিএন) হলো একটি ব্যাকটেরিয়া, যা কার্বাপেনেম নামক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।


বিজ্ঞাপন


আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালী ক্যাম্পাসের সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলা: আর্চ গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) গবেষণা ইউনিটের প্রধান ড. ফাহমিদা চৌধুরী।

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও দ্য টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথের (টিএফজিএইচ) অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের সহায়তায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া গবেষণাটির দ্বিতীয় পর্যায়ে সংকটাপন্ন রোগী, নবজাতক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর এএমআরের প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। গবেষণায়, মা ও শিশুর মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া এবং এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বোঝার জন্য তাদের ওপরও এক বছর বয়স পর্যন্ত গবেষণা পরিচালিত হয়।


বিজ্ঞাপন


গবেষণায় দেখা যায়, এনআইসিইউতে ভর্তি হওয়া নবজাতকের অর্ধেকেরও বেশি (৭০ শতাংশ) হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকার পর সিআর-কেপিএনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিল, যা হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টি নিশ্চিত করে। প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর জীবনে প্রথম বছরের মধ্যেই সিআরই এবং প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে ইএসসিআরইইর কলোনাইজেশন ছিল। যেসব শিশু জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার বেশি হাসপাতালে ছিল, তাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এসব শিশুর ৮০ শতাংশেরও বেশি অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে, যা তাদের শরীরের স্বাভাবিক জীবাণুর উপস্থিতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

২০১৯ সালে শুরু হওয়া গবেষণাটির প্রথম পর্যায়ে সুস্থ ব্যক্তি এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। লোকালয়ে থাকা ৭৮ শতাংশেরও বেশি সদস্য যারা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ ছিল এবং হাসপাতালের ৮২ শতাংশ রোগীর দেহে এক্সটেন্ডেড-স্পেকট্রাম সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরিয়াল ছিল।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. সায়েদুর রহমান। ইউএস সিডিসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস্টার ব্রায়ান হুইলার ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ সায়িদুল হক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রমুখ।

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর