রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

করোনাকালেও নিরবচ্ছিন্ন ছিল প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

করোনাকালেও নিরবচ্ছিন্ন ছিল প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ সেবা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও প্রসূতি ও স্ত্রীরোগের সেবা নিরবচ্ছিন্ন ছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ওজিএসবির ৩৩তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ও ৫১তম এজিএমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


এসময় রোগীদের সুস্থতা নিশ্চিতে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জানিয়ে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগের সেবা সম্পর্কে সাধারণের প্রশ্ন ও দ্বিধা নিরসনে বর্তমান নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে পেশাগত ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনারও পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) পর সবচেয়ে পুরনো যে সংগঠনটিকে আমি চিনি, সেটি হচ্ছে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। তাদের কনফারেন্সে সুযোগ পাওয়ার জন্য ২৪ এর অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য আজকে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের অনেককেই কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিবর্তন, সংস্কার, পুনর্গঠন—বিভিন্ন নামে অনেক কর্মকাণ্ডের সুযোগ আমরা পেয়েছি, ব্যাপক সংখ্যক যুবক ও তরুণের আত্মত্যাগের কারণে। তাদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।’

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটা বাংলাদেশ করার চেষ্টা করছি এবং সকল উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে, যদি মানুষ সুস্থ না থাকে। এই ইট পাথর লোহা লক্করের যে উন্নয়ন হয়েছে, এটা আসলে মানুষের সুস্থতা ছাড়া অর্থহীন, এই কথাটি আমরা এবারে স্পষ্ট করে বুঝছি। আর মানুষের সুস্থতার ক্ষেত্রে ওজিএসবি অন্যতম প্রধান সংগঠন।’

দেশের গাইনোকোলজিস্টদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ৩৫ বা ৪০ বছর যাবত স্বাস্থ্য খাতে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে, তার একটি বা একাধিক বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের এই পেশার একেবারে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।’


বিজ্ঞাপন


দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের নানা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন ডা. সায়েদুর রহমান। বলেন, ‘আপনারা খেয়াল করবেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পরে দেখেছি, চিকিৎসকদের মধ্যে অনেক সংকট, নানা রকম হতাশা ছিল। তাদের সঙ্গে অনেক অন্যায়-অবিচার হয়েছে। এগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে অবস্টেট্রিশিয়ান ও গাইনোকোলজিস্টদের সঙ্গে।’

‘এই কথা স্বীকার করতে আপনাদের কোনো দ্বিধা থাকার কথা না, যে শব্দ দুটো আজকে খুব পরিচিত হয়ে উঠছে, তাহলো—‘সুপার নিউমেরারি’ ও ধারণাভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা।’ এই দুটো শব্দ আবিষ্কারের পেছনে যেই বিষয়টি আমাদেরকে অনেক বেশি তাড়িত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল বিপুল সংখ্যক অবস্টেট্রিশিয়ান ও গাইনোকলজিস্টদের পদোন্নয়নের সমস্যা। আমরা যে সময়সীমার কথা বলেছিলাম, তার মধ্যে কাজটি করতে পারিনি। কিন্তু আপনারা নিশ্চিতভাবে জেনেছেন যে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ৫৪ বছরে যে পদোন্নতি হয়েছে, তার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি। এই পদোন্নতি কে পাবেন, কবে পাবেন—তা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। আমাদের সময় সীমার মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে যেতে পারলে আমরা শান্তি পাবো। সবগুলো বিষয় মানুষের স্বাস্থ্যের কল্যাণে হচ্ছে’—যোগ করেন তিনি। 

এ সময় গাইনোকোলজিস্টদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবার ভূয়সী প্রশংসা করেন ডা. সায়েদুর রহমান। বলেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও যেই সেবাটি মোটেও উপেক্ষিত হয়নি, সেটা হচ্ছে গাইনোকোলজিস্টদের সেবা। আমরা আশা করবো, এই সেবা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো আসছে, যে দ্বিধা এসেছে, আপনাদের নেতৃত্বে এই প্রশ্নগুলোর সমাধান ঘটবে।’

এ সময় গাইনোকলজির চিকিৎসায় তৈরি করা গাইড লাইনের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। পাশাপাশি পেশাগত ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ সহকারী বলেন, ‘একটা শক্ত কথা বলবো, যেই প্রটোকল (গাইড লাইন) আমি উদ্বোধন করলাম, খুব আনন্দের সঙ্গে এটি উদ্বোধন করেছি। এটি পড়ছিলাম আর বলছিলাম, সত্যিই ভালো একটা প্রটোকল হয়েছে, সফল একটা প্রটোকল হয়েছে। এভাবে এক জায়গায় বিষয়গুলো থাকলে সহজেই মানুষ দেখতে পাবে। এটা অনেক ভালো কাগজে ছাপা হয়েছে, বেশ রঙিন। কিন্তু এই বিষয়গুলো এড়ানো দরকার। আজকাল এভাবে আর পৃথিবীতে ছাপা হয় না। আপনাদের প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট ফোন আছে, চাইলেই এই ধরনের প্রটোকল স্মার্টফোনে দিয়ে দেওয়া যাবে। এটাই ভালো। তাতে যখনই প্রয়োজন পড়বে, তখনই দেখতে পারবেন। আমরা যেভাবে ফেসবুক দেখি, মেইল চেক করি—সেইভাবে প্রটোকলটি দেখতে পারবো। তখনই এটি সত্যিকারের ট্রান্সফরমেশন হবে। বই খুলে হয়তো বা আর কোনদিন দেখবো না।’

ছাপাতে গেলে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এর দশ ভাগের এক ভাগ অর্থ দিয়ে এই ধরনের একটি গাইড লাইন দেশের সাড়ে তিন হাজার গাইনোকোলজিস্টদের ফোন নম্বরে সর্বোচ্চ বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আর এটা করতে খুব বেশি টাকাও লাগবে না।’

এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অতএব টাকার জন্য এই পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আপনারা নিশ্চয় জেনেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার যে কর্মসূচি গত ২৭ বছর ধরে চলছিল, এটা থেকে বের হয়ে এসেছে। অতএব পরনির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসা আমাদের একটি সংস্কৃতিগত অবস্থান।’ 

এ সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা যেভাবে ত্যাগের মাধ্যমে এখানে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাদের আগামী দিনগুলো মসৃণ করতে না পারলে আসলেই ঋণগ্রস্ত থেকে যাবো।’

‘অতএব জীবন সায়াহ্নে এসে তরুণদের দেয়া দায়িত্ব পালনের সময় কথাটি রূঢ় শুনালেও আপনাদের সামনে বলে যেতে চাই, দয়া করে আর পরনির্ভরশীল থাকবেন না। এটি আমাদের আত্মসম্মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণও নয় বটে।’

এ সময় আন্তঃডিসিপ্লিনের চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে পেডিয়াট্রিশিয়ান এবং নিউনেটোলজিস্টদের খুবই গভীর একটি সম্পর্ক আছে। আমার খুবই ভালো লাগতো যদি আপনাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন পেডিয়াট্রিশিয়ান ও একজন নিউনেটোলজিস্ট উপস্থিত থাকতেন। এটা আসলে আমার ধারণাগত ব্যাপার। আমরা যারা ল্যামেনের মতো ডাক্তার—অর্ধেক ডাক্তার, অর্ধেক প্রশাসন, অর্ধেক শিক্ষক, অর্ধেক গবেষক। আমাদের কাছে মনে হয়, ব্রিজিংগুলো ভালো হওয়া দরকার। আন্তঃডিসিপ্লিন ব্রিজিং আমাদের সামগ্রিক উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। এটা যত অগ্রসর হবে, স্বাস্থ্য ততোই অর্থবহ হবে।’

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর