বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এফ ব্লকে ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে চালু হলো ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবার দ্বিতীয় শিফট।
রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে মহতী এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিএমইউয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। দ্বিতীয় শিফট চলবে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রথম শিফট চালু রয়েছে। প্রথম শিফটে ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দ্বিতীয় শিফট চালু হওয়ায় প্রতিদিন আরও ২৫ রোগীকে বিশ্বমানের রেডিওথেরাপি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
সে হিসাবে প্রতি মাসে পূর্বের থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ বেশি রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১৭০০-১৮০০ রোগীর রেডিওথেরাপি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিভাগে রয়েছে বিশ্বমানের রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, মেডিকেল ফিজিসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওথেরাপি) সমন্বয়ে গঠিত সুদক্ষ রেডিয়েশন অনকোলজি টিম, যারা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা দেবেন।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবার দ্বিতীয় শিফট চালু করা অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের জন্য একটা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, ‘দুপুর হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন নিস্তব্ধতা নেমে আসে, রেসিডেন্টরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় শিফট চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সন্ধ্যা পর্যন্ত, এমনকি তারপরেও থাকবে প্রাণবন্ত ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এর মাধ্যমে এখানে অধ্যয়নরত রেসিডেন্ট শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। রোগীরা বেশি করে চিকিৎসাসেবা পাবেন। অধিক সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে মিথষ্ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। রেসিডেন্টরা নিজেদেরকে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান গবেষণা কার্যক্রমও আরো সমৃদ্ধ ও জোরদার হবে। জরুরি প্রয়োজনে রোগীরা আরও বেশি চিকিৎসাসেবা পাবেন। একইসঙ্গে দ্বিতীয় শিফটের জন্য ফ্যাকাল্টি নিয়োগের বিরাট সুযোগ তৈরি হবে।’

ভাইস চ্যান্সেলর শাহিনুল আলম তার বক্তব্যে ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে নিয়মিত টিউমারবোর্ড করার উপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ তার বক্তব্যে রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবার দ্বিতীয় শিফট চালু করা বিএমইউয়ের একটি বড় অর্জন ও প্রাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করে ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগ রোল মডেলে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলদার বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গণমানুষের জন্য বিশেষ করে রোগীদেরকে অধিকতর সেবা প্রদানে নিবেদিত প্রাণকর্মী ও অঙ্গীকারাবদ্ধ। রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবার দ্বিতীয় শিফট চালুও সেই প্রচেষ্টার সফল বাস্তবায়ন।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, ‘ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদেরকে রেডিওথেরাপি সেবা নিতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। এখন সেই অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অর্জন।’

ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সৈয়দ আকরাম হোসেন জানান, সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। রোগীদেরকে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাসেবাকে সহজলভ্য করার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকল ধরণের ক্যানসার চিকিৎসার বিশ্বমানের থেরাপেটিক গাইড লাইন তৈরি করা, দেশে প্রথমবারের মতো অর্গান বেইসড ট্রিটমেন্ট চালু করাসহ বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন। ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুন নাহারের সঞ্চালানায় অধ্যাপক ডা. মো. জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুন অর রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোছা রোকাইয়া সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রিফাত জিয়া হোসেন, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন প্রমুখসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, মেডিকেল ফিজিসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা (রেডিওথেরাপি) উপস্থিত ছিলেন।
এএইচ

