সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডা. স্বপ্নীলের সনদ স্থগিত করল বিএমইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৫, ০২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

sopnil
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ সাময়িক স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিএমডিসি রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


এর আগে গত ২১ জুন বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পাঁচ বছরের জন্য ডা. স্বপ্নীলের সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডা. মামুন আল মাহতাবের বিরুদ্ধে রোগী রাহিব রেজার চিকিৎসাকার্যে আনীত অভিযোগের দায় প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৩(১) এবং বিএমডিসি প্রবিধানমালা ২০২২ এর বিধান ৩৬(৪)(খ) অনুযায়ী বিএমডিসি রেজিস্টার থেকে তার নাম প্রত্যাহারপূর্বক প্রদত্ত রেজিস্ট্রেশন পাঁচ বছরের জন্য সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারা অনুযায়ী, এই সময়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেডিকেল চিকিৎসক হিসেবে কোনো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না।

নিষেধাজ্ঞাটি মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।


বিজ্ঞাপন


প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. স্বপ্নীলের অবহেলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাহিব রেজার মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচার দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টে দাখিল করা স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। পাঁচ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া।

ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়নি। এছাড়া এনডোস্কোপি করা হয়েছে অদক্ষ লোক দিয়ে। এমনকি জটিলতা দেখা দিলেও রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে ৮৫ মিনিট সময় ক্ষেপণ করা হয়। এতে তার অবস্থা খারাপ হয় এবং এক পর্যায়ে রাহিব রেজা মারা যান।

এছাড়া দুই বছর আগে প্রকৌশলী আফসার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তেও ডা. স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে ‘দায় খুঁজে পাওয়া’ গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ওই প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধেও মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দেয়। পরে ২৮ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ওই কপি আফসার আহমেদের পরিবারের হাতে আসে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শারাবান তাহুরার সই করা বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী আফসার আহমেদের এন্ডোস্কপিকালীন মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলার কারণে অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক চিকিৎসক মো. আবু জাফরকে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতে বলা হয়, ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বিরুদ্ধে প্রকৌশলী আফসার এন্ডোস্কপিকালীন মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিষয়ে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয় চিঠিতে।

২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ছাতক উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আফসার আহমেদ ধানমন্ডির বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তিনি চিকিৎসক স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং ওই দিন এন্ডোস্কপি করাতে এসেছিলেন। ওই ঘটনার সাড়ে চার মাস পর চিকিৎসক স্বপ্নীল ও ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ করেন আফসার আহমেদের ভাই খায়রুল বাশার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে লিখিত অভিযোগে বাশার ‘চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।

বাশার তার ভাইয়ের মৃত্যুর দিনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তার ভাই। ডা. স্বপ্নীল রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন সেখানে অ্যান্ডোস্কপি, কোলনস্কপিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চার দিন পর ৯ নভেম্বর এন্ডোস্কপি ও কোলনস্কপির পরীক্ষার সময় দেন। সে অনুযায়ী ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল যান আফসার আহমেদ।

অভিযোগে বলা হয়, এন্ডোস্কপি করার দিন হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে জানানো হয় বিকাল ৪টায় অ্যান্ডোস্কপি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সকালে শুরু করা হলেও পরীক্ষাটি করা হয় রাত ৮টায়।

‘ডা. স্বপ্নীল এসে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো পর্যবেক্ষণ না করে, কোনো ধরনের প্রি-ইভালুয়েশন ছাড়াই অ্যানেস্থিশিয়া প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেস্ট করানোর এক পর্যায়ে আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা আমার ভাইয়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে’—যোগ করেন বাশার।

এসএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর