রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইআরপিপি কর্মীদের মার্চ টু যমুনায় বাধা, সচিবালয়ে প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ইআরপিপি কর্মীদের মার্চ টু যমুনায় বাধা, সচিবালয়ে প্রতিনিধি দল
আরপিপি কর্মীদের মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি। ছবি- ঢাকা মেইল

পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন আদায় ও চাকরিতে স্থায়ীকরণের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের কর্মীদের পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সামনে থেকে ‘মার্চ টু যমুনা’ শুরু হলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের বাধা দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


পরে ইআরপিপি কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এছাড়া তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন বলে জানা গেছে।

ইআরপিপি কর্মীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি শুরু করেন তারা। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হওয়া এই র‌্যালি যমুনা অভিমুখে যাওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের বাধায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল অতিক্রম করতে পারেনি। বকেয়া বেতন, চাকরিতে পুনর্বহাল এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে টানা পাঁচ দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে অবস্থানের পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

আন্দোলনরত ইআরপিপি প্রকল্পের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. শামীম শাহ বলেন, ‘সচিবালয়ে আমাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছে। তারা ফিরে এলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

ইআরপিপি কর্মীরা বলছেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনা মহামারী শুরুর পরে পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ধাপে ধাপে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কাজ চালিয়ে যেতে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আপনারা যার যার কর্মস্থলে কাজ অব্যাহত রাখুন, আপনাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।’


বিজ্ঞাপন


A2

তারা আরও বলেন, আমরা সেই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মে পর্যন্ত কাজ অব্যাহত রাখি। কিন্তু ২৫ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা ও গবেষণা শাখা থেকে চিঠি দিয়ে আমাদের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়, যা আমাদের সঙ্গে চরম অন্যায় এবং অবিচার।

তারা জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে তারা মাঠপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, আইসোলেশন ইউনিট গড়ে তোলার পেছনে তাদের শ্রম ও দক্ষতা ছিল।

তাদের অভিযোগ, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর মৌখিকভাবে তাদের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার কথা বললেও ২৫ মে হঠাৎ চিঠি দিয়ে কর্মবিরতির নির্দেশ দেয়। এতে তারা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন।

আন্দোলনরত ইআরপিপি কর্মীরা বলেন, ‘করোনাভাইরাস আবারও নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে, তাহলে এখন আমাদের হাতে গড়া সেই আর-টি পিসিআর ল্যাব, করোনা ডেডিকেটেড আইসিইউ কাদের দিয়ে চালানো হবে? নাকি আমাদের শ্রমের বিনিময়ে গড়া পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ চালানোর জন্য আমাদের পদে নতুন করে লোক নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চালানো হচ্ছে? আমরা এর প্রতিবাদ, চাকরি বহাল রাখা এবং রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে কর্মসূচি পালন করছি।’

মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শরিফুল ইসলাম বলেন, মহামারীর শুরুতে যখন সবাই ঘরবন্দি, তখন আমরা পিপিই পরে হাসপাতাল, ল্যাব, কুইক রেসপন্স টিমে কাজ করেছি। নিজে সংক্রমিত হয়েছি, তবু দায়িত্ব থেকে পিছপা হইনি। অনেক সহকর্মী পরিবার ছেড়ে দিনের পর দিন হোটেলে বা আলাদা বাসায় ছিলেন, যাতে পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত না হন। আজ সেসব সহকর্মীদের মুখে হতাশা, বিষণ্নতা। চার বছর কাজ করেও আজ আমরা কর্মহীন, অথচ আমাদের তৈরি ল্যাব-আইসিইউ এখন নতুন লোক দিয়ে চালানোর পাঁয়তারা চলছে। এটা শুধুই অবিচার নয়, এটা এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।

আরেক কর্মী আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের কোনো ভাতা, ইনক্রিমেন্ট বা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তবু আমরা বিনা প্রশ্নে কাজ করে গেছি, কারণ এটা ছিল দেশের প্রয়োজনে, মানুষের সেবায়। এখন সেই অভিজ্ঞতাকে সম্পদ না ভেবে বোঝা মনে করা হচ্ছে। নতুন করে লোক নিয়োগ দেওয়া মানে শুধু খরচ বাড়ানো নয়— এটা প্রশিক্ষণ, সময়, দক্ষতার অপচয়ও। আমরা চাই, আমাদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হোক। চাকরি রাজস্বখাতে নিয়ে এসে আমাদের স্থায়িত্ব দেওয়া হোক।

এসএইচ/এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর