কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে মর্ডান জেনারেল হাসপাতালে চরম গাফিলতির ঘটনায় মায়ের জন্য নির্ধারিত এনটিডি (Anti-D) ইনজেকশন ভুল করে নবজাতককে পুশ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ শুরু করেন, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতালজুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নবজাতকের মা তন্নী আক্তার (২০) রোববার (৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। দুপুর ১টায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন, সিজার পরিচালনা করেন ডা. শাহিন সুলতানা মিরা এবং এনেস্থেসিয়া দেন ডা. আশরাফুল।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের অভিযোগ, সিজারের পর মায়ের রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী চিকিৎসক NTD ইনজেকশন আনতে বলেন। তন্নীর স্বামী রুবেল মিয়া ইনজেকশনটি কিনে এনে হাসপাতালের নার্স স্বপ্না আক্তারের হাতে তুলে দেন। কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গেলে ফিরে এসে দেখেন, সেই ইনজেকশন ভুল করে তার নবজাতক সন্তানকে পুশ করে দেওয়া হয়েছে।
রুবেল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি নার্সকে ইনজেকশন দিই, কিন্তু এসে দেখি বাচ্চাকে দিয়ে ফেলছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, ডাক্তার বলেছে দিতে! এত বড় ভুল কীভাবে হয়? একজন নার্স নিয়োগ দেওয়ার সময় কি কিছুই যাচাই করা হয় না?’
ভুল ইনজেকশন দেওয়ার সময় ছিল বিকেল সাড়ে ৪টা। এরপর থেকেই নবজাতকের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের পরিচালক তাকে জেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রেফার করেন। ঘটনাটির পরপরই নবজাতকের দাদি ও অন্যান্য স্বজনরা প্রতিবাদ শুরু করেন, যা দ্রুত বিক্ষোভে রূপ নেয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পুলিশ এসে ভেতরের পরিবেশ শান্ত করে, কিন্তু হাসপাতালের বাইরে স্বজনরা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন।
নবজাতকের দাদি অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ শুধু হাসপাতালকে রক্ষা করতে চাচ্ছে। আমাদের কোনো সহায়তা করছে না।’ বিষয়টি সত্যতা যাচাই করতে পরিচালকের রুমে গেলে, ক্যামেরা দেখে পুলিশ সদস্যরা তেড়ে আসে। বার বার ক্যামেরা বন্ধ করতে বলে।
হোসেনপুর পুলিশের পরিদর্শক রতন ও কনস্টেবল রেজাউল এসে বারবার সাংবাদিকদের ভিডিও বন্ধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাহিন সুলতানা মিরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে অফ ক্যামেরায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘এটি একটি ভুল হয়েছে। নার্স ভুল করেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে আশপাশের লোকজনের অভিযোগ, এমন ভুল চিকিৎসা এই হাসপাতালে প্রায়ই ঘটে।
এ ঘটনার পর পুরো হাসপাতাল চত্বরে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। নবজাতকের চিকিৎসা বর্তমানে চলছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। তবে পরিবারের সদস্যরা শঙ্কায় আছেন ইনজেকশনের প্রভাব নিয়ে। তারা এই চরম গাফিলতির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, এই ভুলটি গুরুতর। চিকিৎসকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার ছিল। তবে এমন ঘটনার পর নবজাতকের রিস্ক ফ্যাক্ট রয়েছে।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। যেখানে হরহামেশাই ঘটছে এরকম ভুল চিকিৎসার ঘটনা। জনগণের দাবি, এমন ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।
প্রতিনিধি/জেবি

