বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা মাকসুদ রুনাকে নিয়মবহির্ভূত ও অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলনের বিরুদ্ধে।
রোববার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. রেজাউর রহমান তালুকদার ও মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. শারমিন ইয়াসমিন প্রমুখ।
ডা. ফারজানা মাকসুদ বলেন, তারেক রহমানের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি এবং আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। আপনি এটা খতিয়ে দেখবেন, আপনার নাম ব্যবহার করে যারা আমাদের মতো সৎ ও নিষ্ঠাবানদের চাকরিচ্যুত করেছে, তাদের বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি জুলাই আন্দোলনের একজন সম্মুখযোদ্ধা ছিলাম এবং জীবনবাজি রেখে রাস্তায় নেমেছি। ভাগ্যের পরিহাস, হাসিনার পতন হলেও আরেক ফ্যাসিস্ট ডা. দোলন অবৈধভাবে প্রাণের মেডিকেলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হন। তিনি আমাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছেন। আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ ও ন্যায়বিচার কামনা করছি।
এই চিকিৎসক বলেন, গত ১৭ মে গভর্নিং বডি প্রেস কনফারেন্স করে আমার মানহানি করেছে। আমি বলেছি, কনফারেন্স যেন আমার সামনে করা হয়, কিন্তু তা করা হয়নি। লুকোচুরি করে কনফারেন্স করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ডা. দোলনের জুনিয়র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে, সেই বাহিনী দিয়ে শিক্ষকদেরকে হয়রানি এবং লাঞ্ছিত করেন তিনি। আমি এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। এরপর থেকে আমি তাদের রোষানলে পড়েছি।
তিনি বলেন, গত ১৫ মে অন্যায় ও মিথ্যা অভিযোগে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে, ফেইক আইডি দিয়ে ফেসবুক পেইজ খুলে মেডিকেল কলেজের ঊর্ধ্বতনদের গালাগালি করেছি এবং বাজে আচরণ করেছি। নিয়মবহির্ভূতভাবে ছুটি কাটিয়েছি এবং কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত। সেইসঙ্গে সময়ে-অসময়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাই। আদতে আমি এমন কিছুই করিনি। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
অফিসে অনিয়মিত অভিযোগের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত করা হোক, আমি চ্যালেঞ্জগ্রহণ করতে রাজি। যেসব ছুটি নিয়েছি, তা নিয়ম অনুযায়ী নিয়েছি। অননুমোদিত ছুটি ভোগ করার গল্প সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া সাজানো।
অধ্যাপক ডা. রেজাউর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর বর্তমান গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন আসার পর নতুন করে মেডিকেলে ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যারাই তার পদলেহন করেন না, তাদেরকে চাপের মধ্যে রাখেন এবং চাকরিচ্যুত করেন। আমার ছেলে ডা. আবরারও এখানে কর্মরত ছিল। কিন্তু মিথ্যা ও ঠুনকো অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। এছাড়া অনেক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের ওপর কারও কারও ভোগ-দখলের নজর পড়েছে। বর্তমান পরিচালনা কমিটির সৎ ও ভালো কর্মকর্তাদেরকে নানা অভিযোগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। ডা. ফারজানা মাকসুদা সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে, এখন যা করা হচ্ছে তা মেনে নেওয়ার মতো না।
তিনি আরও বলেন, ডা. দোলন প্রকাশ্যে মহিলাদেরকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগালি করেন এবং কেউ তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। সেইসঙ্গে হুমকি দেন। যারা এখানে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন এবং ত্যাগী চিকিৎসক ছিলেন, তারা এখানে কাজ করবেন–এটাই স্বাভাবিক ছিল, তা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ডা. দোলন আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ এবং বিএনপির দুঃসময়ে কাজ করেছেন। যা শুনেছি, তা একেবারে অপ্রত্যাশিত। যারা জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করেছে, ফ্যাসিবাদের পতনের পর তাদেরকে অবহেলা করা- এটা কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ডা. দোলন আমার যত কাছেরই হোক, এই কাজটা আমার কাছে ভালো লাগেনি, বিষয়টা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং যেসব অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেগুলো কতটুকু সত্য বা দোষ কতটুকু দেখা উচিত।
এসএইচ/এএইচ

