চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন আদায়ের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কোভিড-১৯ ইর্মাজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেসের (ইআরপিপি) প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা।
দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে যৌক্তিক দাবি পূরণে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়া এক হাজার চারজন কর্মী।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
এসময় ল্যাব কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রহমান রাসেল, মেডিকেল অফিসার ডা. নুর হোসেন, ডাটা এন্টি অপারেটর আশরাফুল ইসলাম, নার্স এনামুল হক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জিন্নাত পারভিন ও আবু সুফিয়ান, ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট শফিকুল ইসলাম, ডাটা এন্টি অপারেটর মীম আক্তার ও মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট শরীফ পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তারা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের অধীনে কর্মরত ১০০৪ জন জনবল বিগত চার মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। ২০২০ সাল থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ইআরপিপি প্রকল্পের অধীনে ডাক্তার থেকে শুরু করে ল্যাব কনসালট্যান্ট, নার্স, টেকনোলজিস্ট, কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাব এটেনডেন্ড, ওয়ার্ডবয়য়, আয়া এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী দেশজুড়ে জীবনভয় তুচ্ছ করে অত্যন্ত নিষ্ঠর সাথে কাজ করে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকাণ পালন করে এসেছে।’
প্রকল্পের কর্মীরা জানান, ‘গত বছরের ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে প্রকল্পের ১১তম প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অতিরিক্ত মহাপরিচালকরা (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পের জরুরি জনবলের রাজস্বকরণের লক্ষ্যে রাজস্ব খাতে পদসৃজনের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে জানতে চান এবং প্রকল্প পরিচালক জানান রাজস্ব খাতে জনবলের পদসৃজনের প্রস্তাব স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছিল এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সুপারিশের আলোকে রাজস্ব খাতে জনবলের পদসৃজনের প্রস্তাবনা পুনরায় প্রণয়নের কাজ চলছে। সভায় পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মতামত দেন যে, প্রকল্পের সারা দেশেব্যাপী সেবাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জরুরি জনবলের রাজস্বকরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ব্যাপারে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। সভায় রাজস্ব খাতে জনবলের পদ সৃজনের প্রস্তাবনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
বিজ্ঞাপন
‘পরবর্তীতে স্বাস্থ্য সেবা বিভগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ৭ জানুয়ারি প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির ১৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ জনবলের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অর্থ বিভাগের সম্মতি গ্রহণের জন্য পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রকল্প মেয়াদে সেবা চলমান রাখার জন্য প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের রাজস্ব অংশে অব্যয়িত অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সভার প্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক ১২ পদের ১০০৪ জন জনবলকে সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এবং তাদের নতুন বেতন কাঠামো উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠান।
এসময় প্রকল্পের কর্মীরা বলেন, গত ১৮ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির ১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক ১০০৪ জন জনবলের মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানান।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে সভায় প্রকল্পের মেয়দ ছয় মাস (জুলাই ২০২৫ হতে ডিসেম্বর ২০২৫) বৃদ্ধির প্রস্তাব স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রেরণ ও পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রণীত সমাপ্তির তালিকা থেকে প্রকল্পের নাম প্রত্যাহারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থপনা বিভাগ থেকে গত ২৩ মার্চ জানানো হয়, ‘কোভিড-১৯ ইআরপিপি’ প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ ১০০৪ জন জনবলের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের রাজস্ব অংশে অব্যয়িত অর্থ থেকে সেবামূল্য পরিশোধের বিষয়টি বাজেট অনুবিভাগ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই এবং প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে বাজেট-১ অনুবিভাগে পাঠানো হয়।
অথচ গত ৫ মে প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা-১ থেকে জারি করা চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ১০০৪ জন জনবলের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিষয়ক অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতির কোনো প্রমাণ নেই।
কর্মীরা বলেন, গত ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ১০০৪ জন জরুরি জনবলের বেতন দেওয়ার লক্ষ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত কর্মরত জনবলের হাজিরা শিট স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি ইস্যু করে। পরবর্তীতে ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা দপ্তর হতে প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত জনবলের প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত কর্মরত জনবলের হাজিরার তথ্য চাওয়া হয়।
তথ্য চাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে কর্মরত প্রকল্পের জনবল তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধমে তিন মাসের (জানুয়ারি হতে মার্চ ২০২৫) হাজিরার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং প্রকল্প কার্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ৫ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা-১ হতে জানানো হয়ম ১জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের সব জনবল অনুপস্থিত এবং তারা কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না।
তারা বলেন, নিয়মিতভাবে কর্মস্থলে উপস্থিত এবং চাহিদা মতো প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধমে তিন মাসের (জানুয়ারি থেকে মার্চ-২০২৫) হাজিরার তথ্য পাঠানোর পরও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের সম্মুখ যোদ্ধা ইআরপিপি প্রকল্পের ১০০৪ জন দক্ষ জনবল।
তারা আরও বলেন, সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোভিড নিয়ন্ত্রণের ইআরপিপি প্রকল্পের ১০০৪ জন জনবলের বকেয়া বেতন, চুক্তি বর্ধিতকরণ ও প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত পিসিআর ল্যাব, মডার্ন মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব, আইসিইউ ও এপিডেমিওলজিকাল ইউনিটের সেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রকল্পের দক্ষ জনবলের রাজস্বকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এসএইচ/এএইচ

