শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ যেভাবে করবেন 

ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী 
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২২, ১২:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ যেভাবে করবেন 

যারা প্রস্রাব ঝরা রোগের স্বীকার  তারা পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ  করতে পারেন। এই ব্যায়াম আপনাকে প্রস্রাব আটকে রাখতে সহায়তা করবে। প্রস্রাব আটকাতে হলে শুরুতে তলপেটের একেবারে নিচের দিকে চাপ দিতে হয়। প্রস্রাব না লাগলেও ওই অংশের মাংসপেশিগুলো চাপ দিয়ে ধরার এ ব্যায়ামকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বলে। যেন জরায়ুমুখের মাংসপেশিগুলো আপনি নিজে নিজে চাপ দিয়ে সংকুচিত করছেন। কিংবা যে ভাবে পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসা বাতাস আটকানোর চেষ্টা করা হয়। 

সন্তানধারণ ও জন্মদানের পর মায়ের শরীরে ঘটে নানা পরিবর্তন। বয়সের সঙ্গেও বদলাতে থাকে অনেক কিছু। এসব কারণে পরবর্তী জীবনে কিছু অস্বস্তিকর সমস্যায় পড়তে পারেন মায়েরা।


বিজ্ঞাপন


হাঁচি বা কাশির সময় হঠাৎ সামান্য একটু প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়া এমনই এক সমস্যা। প্রস্রাবের চাপ লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বাথরুমে না গেলে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। অনেকের জরায়ু কিংবা জরায়ুমুখ ধীরে ধীরে নেমে আসতে থাকে। এসব বিব্রতকর সমস্যা এড়াতে সন্তান জন্মদানের পর বিশেষ ব্যায়াম শুরু করা উচিত।

প্রস্রাব আটকে রাখার চেষ্টা করার সময় তলপেটের একেবারে নিচের দিকে চাপ দিতে হয়। প্রস্রাব না লাগলেও ওই অংশের মাংসপেশিগুলো চাপ দিয়ে ধরার এ ব্যায়ামকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বলে। যেন জরায়ুমুখের মাংসপেশিগুলো আপনি নিজে নিজে চাপ দিয়ে সংকুচিত করছেন। কিংবা পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসা বাতাস আটকানোর চেষ্টা করছেন।

শুরুতে তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ড পর্যন্ত চাপ দিয়ে রাখুন মাংসপেশিগুলো। চাপ ছেড়ে দেওয়ার পর আরামদায়ক অবস্থায় থাকুন তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ড। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০ বার পরপর করুন। প্রতিদিন অন্তত তিন-চারবার। প্রথমবার ব্যায়াম শুরু করবেন শোয়া অবস্থায়। পরে খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে গেলে বসে, এমনকি দাঁড়ানো অবস্থাতেও ব্যায়ামটি করা যায়। পেশি চাপ দিয়ে রাখার সময়ও বাড়ান ধীরে ধীরে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত চাপ দিয়ে রাখতে পারবেন।

exerciseএই ব্যায়ামের সময় অন্য কোনো পেশি টান টান করা যাবে না। অর্থাৎ, পেট, পা এবং শরীরের অন্য অংশগুলো স্বাভাবিক ও আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।

ব্যায়ামের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখবেন। অভ্যস্ত হয়ে গেলে এই ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ না রাখলেও চলবে। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যায়ামটি করা সম্ভব।


বিজ্ঞাপন


কিগেল ব্যায়াম, বা পেল্‌ভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ, আপনার শ্রোণীর পেশিগুলোকে শক্ত করে তোলে, অর্থাৎ যে পেশীগুলো আপনার জরায়ু, মূত্রথলি, আর অভ্যন্ত্রের ভারবহন করে। কিগেল ব্যায়াম আপনার যোনীর পেশীকে শক্তি দেয়। এই পেশীগুলো আপনার মূত্রের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে আর শ্রোণীর অঙ্গগুলো জায়গায় রাখতে সাহায্য করে। 

এই ব্যায়াম কেন করবেন?
গর্ভাবস্থার সময় পেশীশক্তি বাড়ালে তা আপনার জন্মদানের প্রক্রিয়ার সময় পেশী নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এই পেশীগুলোর স্বাস্থ্য বজায় রাখলে গর্ভাবস্থার সঙ্গে জড়িত দুটি প্রধান সমস্যাকে লঘু করে তোলে – মুত্রথলির নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা এবং হেমরয়েড্‌স। পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ যেটি কিগেল ব্যায়াম নামে পরিচিত। এটি সাধারণত জন্মদানের পরে সুপারিশ করা হয়, কারণ এটি মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে ও পেরিনিয়ামকে সাধারণ অবস্থায় ফেরত নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এর বিষয়ে সবচেয়ে সুবিধার জিনিস হল এই যে এগুলো যে কোন সময়, যে কোন জায়গায় করা যায়, এবং কেউ জানতেও পারে না

কীভাবে এটি করবেন?
এই ব্যায়ামের প্রাথমিক পর্যায় হল আপনার প্রস্রাব ধরে রাখার ভান করা। আপনার যোনীর পেশীগুলোকে ১০ সেকন্ডের জন্য সঙ্কুচিত করুন, তারপর আসতে আসতে শিথিল করে দিন। মাঝে মাঝে লোকে ভুল পেশীর ওপর চাপ দেয়, যার ফলে এই ব্যায়ামের কোন সুফল পাওয়া যায় না। পেশী সটান করার সময় আপনি নিজের যোনীর মধ্যে আঙুল দিয়ে দেখতে পারেন যে আঙুলের ওপর চাপ পড়ছে কি না। যখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শ্রোণীর বা “পেল্‌ভিক ফ্লোর”-এর পেশী কোনটা, তখন চেষ্টা করুন সেটাকে ৫-১০ সেকন্ড সঙ্কুচিত করে রাখতে, এবং তার পরে শিথিল করে দিন। এটা ১০-২০ বার করুন। চেষ্টা করবেন যেন শরীরের বাকী সব পেশী, যেমন পেট বা ঊরুর পেশী, সম্পূর্ণ শিথিল থাকে আপনার যোনীর পেশী সঙ্কুচন করানোর সময়। এটা মূত্রথলি খালি থাকলে করবেন, এবং পুরো ব্যায়ামের সময় স্বাভাবিক নিশ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখবেন।

লেখক: ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী 
সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। 

ডিএইচডি/এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর