মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

টিকা প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে ৪০ ও সদর দফতরে ৪৩ শতাংশ পদ খালি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

টিকা প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে ৪০ ও সদর দফতরে ৪৩ শতাংশ পদ খালি

রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তবে নানা অব্যবস্থাপনায় ইপিআই কভারেজ কোনোভাবেই  ৮৪ শতাংশের ওপরে উঠতে পারছে না। এখনও টিকা প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে ৪০ শতাংশ ও সদর দফতরে ৪৩ শতাংশ পদ খালি রয়েছে। যা টিকা কর্মসূচির সামগ্রিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটাচ্ছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ’র যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণাগুলোর পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ নিয়ে উক্ত আলোচনা করেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দ জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দফতরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। কারণ আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি পঞ্চাশ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদান কেন্দ্রের অসম বণ্টন লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যে সংখ্যায় টিকাদানকেন্দ্র থাকা দরকার সেই সংখ্যক টিকাদান কেন্দ্র নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টিকাদান কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে। এছাড়া ৫ম এইচপিএনএসপি (স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম) এখনও অনুমোদিত হয়নি। এর ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহণ এবং বণ্টন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে।

ইপিআই’র সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, অক্টোবর ২০২৪ সাল পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু অ্যান্টিজেন যেমন পিসিভি, ওপিভি এবং এমআর টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মীদের নিয়োগের পর টিকাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের বাবস্থা থাকলেও রিফ্রেসার প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া সারাদেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি, হাওর এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় যানবাহনের সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পরিবহন সহজ হয় না। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।


বিজ্ঞাপন


গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া, জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা, জনসংখ্যার ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে টিকা কেন্দ্রের সুষম বন্টন, প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে যথাযথ বাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ইপিআই প্রোগ্রাম মনিটরিং এবং মূল্যায়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করে মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

একইসঙ্গে ভৌগলিক এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য চিহ্নিত করতে এবং শহুরে টিকাদান নীতিকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। টিকাদানের ক্ষেত্রে একটি ডাটাবেস তৈরি এবং কার্যকর করা প্রয়োজন। যা জাতীয় কর্মশক্তি পরিকল্পনার জন্য সঠিক তথ্য নিশ্চিত করবে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মানুষের মধ্যে টিকাদান নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট কৌশলের পরিকল্পনা (ম্যাপিং, মোবাইল ক্লিনিক, ডোর-টু-ডোর টিকাদান) বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকাদানের জন্য সর্বোত্তম বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি অ্যাডভোকেসি, বিকল্প তহবিল উৎসের জন্য নীতি সংস্কার এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাও জরুরি বলে গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়। 

এমএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর