শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও একজনকে থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও একজনকে থাইল্যান্ড পাঠাচ্ছে সরকার

রাজধানীর গুলশানের ‘ক্যাফে রিও’র ম্যানেজার ছিলেন মো. মুরাদ ইসলাম। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার। ইচ্ছে ছিল ছেলেকে হাফেজ বানাবেন। তবে ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় একটি বুলেট তার সাজানো সংসার তছনছ করে দেয়। চার মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন মুরাদ তিন মাস ধরে ভর্তি রয়েছেন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে। এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

আগামীকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মুরাদকে বহনকারী বিমান থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। সেখানে তাকে বিদায় জানাবেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও নাগরিক কমিটির নেতা ডা. আহাদ।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে, গত ১৮ জুলাই অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে মিরপুরের সেনপাড়ায় পানির ট্যাংক এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের গুলিতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ওই সময় ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মুরাদ। গুলি তার গলার ডান পাশে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। শুরুতে তাকে স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মুরাদের স্ত্রী রানী ইসলাম বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চারদিক থেকে গুলিবিদ্ধ রোগী আসায় চিকিৎসা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরে ভাস্কুলার সমস্যার কথা বলে হৃদরোগে পাঠানো হয়। সেখান থেকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। তিন মাস ধরে মুরাদ এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মুরাদের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, ছেলের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন ছিল যে চিকিৎসক মৃত্যুর সংবাদ শুনতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। এখন কিছুটা উন্নতি হলেও গলা থেকে পুরো শরীর অবস। হাত, পা ও শরীরের কোনও অংশই সক্রিয় নয়। এজন্য রোবট থেরাপি দরকার, যা বাংলাদেশে নেই।


বিজ্ঞাপন


murad1

রানী ইসলাম বলেন, আইসিইউতে মুরাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে খালি কান্না করে। ছেলেকে নিয়ে খুব আশা ছিল ওর। ছেলের জন্য কান্না করতে করতে মুরাদ বলেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেকে বড় হাফেজ করার। এখন আমার তো উপার্জন নাই। এখন কীভাবে ছেলেকে হাফেজ করব? সুস্থ হলেও তো কিছু একটা করে করে খেতে পারতাম।

আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তিন মাস ধরে তো মুরাদের ইনকাম নেই। মেয়েকে বললাম বাসা পরিবর্তন করি। খরচ কম হবে। মেয়ে বলল, মা খাবার কম দিও কিন্তু থাকার কষ্ট দিও না।

একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মুরাদের স্ত্রী রানী ইসলাম। তিনি জানান, মুরাদের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা করেছেন তাতে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুরাদের হাত-পা সচল করার জন্য প্রয়োজন রোবোটিক ফিজিওথেরাপি। দেশে রোবোটিক ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা নাই। এজন্য থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাকে।

উল্লেখ্য, যোগদানের পর থেকেই আহতদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। গত রোববার (১৭ নভেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত কাজল মিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। সেদিনই মুরাদকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল হাসপাতালে টাকা জমা দেওয়া হয়। আজ (মঙ্গলবার) বিমান বাংলাদেশের টিকিট করা হয়। আগামীকাল বিমানের বিজি ৩৮৮ ফ্লাইটে তাকে ব্যাংকক নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমার প্রধান কাজ হচ্ছে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এজন্য বিদেশ থেকে অনেকগুলো মেডিকেল টিম এনেছি। ইতোমধ্যে ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাদেরকেই বিদেশি পাঠানো হবে যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।

এমএইচ/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর