দেশের চিকিৎসা খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। শক্তিশালী আইনের ভিত্তিতে দেশের চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও কাজের নজরদারিসহ যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কার্যপরিধি ব্যাপক হলেও জনবল সংকট ও জায়গার সংকুলানের অভাবে ধুকছে বিএমডিসি। এমনকি গত ১৪ বছরে বিএমডিসিতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা ১৪৭টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৭১টি নিষ্পত্তি করতে পেরেছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।
বিএমডিসি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। এরপর গত চার দশকে দেশে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৬ গুণ। আর নিবন্ধিত চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৭ গুণেরও বেশি।
বিজ্ঞাপন
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮১ সালে দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ছিল ৮টি, ডেন্টাল কলেজ ছিল মাত্র একটি, আর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (এমএটিএস) ছিল ৫টি। বিএমডিসিতে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছিল ১০ হাজার ৬৫ জন, দন্ত চিকিৎসক ২০৭ জন এবং চিকিৎসা সহকারীদের নিবন্ধন তখনও শুরু হয়নি। বর্তমানে দেশে ১১৪টি মেডিকেল কলেজ, ১৩টি ডেন্টাল কলেজ, ২২টি ডেন্টাল ইউনিট এবং ২১৬টি এমএটিএস রয়েছে। নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১০৪ জন, দন্ত চিকিৎসক প্রায় ১৩ হাজার, এবং চিকিৎসা সহকারীর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ৯৪২ জন।
কিন্তু দায়িত্ব বহুগুণে বেড়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির জনবল ও স্থান সংকুলান বাড়ানো হয়নি। এদিকে দেশে একের পর এক চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠলেও জনবল সংকটে তদন্তে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ফলে মব জাস্টিসের শিকার হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টরা। নানা জটিলতায় মুখোমুখী অবস্থায় রয়েছে চিকিৎসক ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখেও পড়েছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে দায়িত্ব পালনে বেগতিক অবস্থা বিএমডিসির।
১৯৮১ সালে দেশে মোট মেডিকেল কলেজ ছিল ৮টি, ডেন্টাল কলেজ ছিল মাত্র একটি, আর মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (এমএটিএস) ছিল ৫টি। বিএমডিসিতে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছিল ১০ হাজার ৬৫ জন, দন্ত চিকিৎসক ২০৭ জন এবং চিকিৎসা সহকারীদের নিবন্ধন তখনও শুরু হয়নি। বর্তমানে দেশে ১১৪টি মেডিকেল কলেজ, ১৩টি ডেন্টাল কলেজ, ২২টি ডেন্টাল ইউনিট এবং ২১৬টি এমএটিএস রয়েছে। নিবন্ধিত চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১০৪ জন, দন্ত চিকিৎসক প্রায় ১৩ হাজার, এবং চিকিৎসা সহকারীর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ৯৪২ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হলেও বিএমডিসির নিজস্ব কোনো ভবন নেই। স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টির ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের জায়গায় নাসিং কাউন্সেলের সঙ্গে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের। যেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিল সভা আয়োজনের পর্যাপ্ত স্থানও নেই। এছাড়া সীমিত জনবলও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে বড় বাঁধা সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সীমাবদ্ধতা
দেশে চিকিৎসকের অনিয়ম ও অবহেলার বিচারের সর্বোচ্চ স্থান বিএমডিসি। ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত নানা অনিয়মে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিএমডিসিতে ৪৩৩টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪৭টি অভিযোগের বিস্তারিত নথি রয়েছে। অপর্যাপ্ত জনবল ও জায়গার সংকুলানের ফলে বিএমডিসির পক্ষে সকল অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৭১টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এসবের মধ্যে ২০টিতে অভিযোগ খারিজ, ২০টিতে আপস-মীমাংসা হয়েছে, ৫টিতে ভর্ৎসনা করা হয়েছে এবং ৯ জনকে সতর্কতামূলক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে শাস্তি হিসেবে একজন চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল এবং ১৭ জনের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। এদের মধ্যে ৩ মাসের জন্য একজনের, ৬ মাসের জন্য ৬ জন, এক বছরের জন্য ৭ জন, ২ বছরের জন্য একজন এবং ৫ বছরের জন্য একজনের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। এ সময় তারা কোনো প্রকার চিকিৎসা সেবায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে জনবল সংকটের কারণে নিবন্ধন স্থগিত থাকা অবস্থায় এসব চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা থেকে বিরত ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তদারকি করা হয়নি।
এছাড়া ভুয়া চিকিৎসক চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসকদের পেশাগত অসদাচরণ ও অবহেলার অভিযোগের তদন্তে অনেক সময় লাগছে। অভিযোগ সত্যতা প্রমাণিত হলে চিকিৎসকের নিবন্ধন স্থগিত করার পরও তার ওপর পর্যবেক্ষণ করার জন্য তদারকি কার্যক্রমের অভাব রয়েছে।
নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এসবের মধ্যে ২০টিতে অভিযোগ খারিজ, ২০টিতে আপস-মীমাংসা হয়েছে, ৫টিতে ভর্ৎসনা করা হয়েছে এবং ৯ জনকে সতর্কতামূলক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে শাস্তি হিসেবে একজন চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল এবং ১৭ জনের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। এদের মধ্যে ৩ মাসের জন্য একজনের, ৬ মাসের জন্য ৬ জন, এক বছরের জন্য ৭ জন, ২ বছরের জন্য একজন এবং ৫ বছরের জন্য একজনের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। এ সময় তারা কোনো প্রকার চিকিৎসা সেবায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে জনবল সংকটের কারণে নিবন্ধন স্থগিত থাকা অবস্থায় এসব চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা থেকে বিরত ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তদারকি করা হয়নি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কর্ম পরিকল্পনা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরবর্তীতে গণঅভ্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সকল সেক্টরে সংস্কারের দাবি উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে বিএমডিসিতেও। গতমাসের শেষ সপ্তাহে বিএমডিসির নতুন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম।
কাউন্সিল গঠন হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম নবনির্বাচিত কাউন্সিল সদস্যদের অভ্যর্থনা জানান। পরে নব নিযুক্ত বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নতুন কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএমডিসির নিজস্ব ভবনের অভাব রয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানটি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টির পাঁচ হাজার বর্গফুটের জায়গায় নাসিং কাউন্সেলের সঙ্গে কার্যক্রম চালায়। এ সমস্যার সমাধানে এবং আঞ্চলিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কার্যালয় স্থাপন ও জনবল বাড়ানো পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএমডিসির প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে চিকিৎসক নিবন্ধন ও নবায়ন অনলাইনে সম্পন্ন করা হবে, যা নিবন্ধন প্রার্থীদের দীর্ঘ প্রক্রিয়াজনিত অনীহা দূর করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত পর্যালোচনার জন্য নতুন স্কোরিং পদ্ধতির প্রবর্তন করার কথা জানান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ঘাটতি পূরণের জন্য সময়মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে বলেও জনিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি চিকিৎসকদের পেশাগত অসদাচরণসহ সব অভিযোগ নিষ্পত্তিতে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতির কথা জানান। একইসঙ্গে ভুয়া চিকিৎসকদের নিবন্ধন ঠেকাতে এবং সঠিক সময়ে তাদের চিহ্নিত করতে প্রযুক্তিগত সমাধানের পরিকল্পনার কথা জানান।
এমএইচ/এএস