রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী চিকিৎসকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী চিকিৎসকরা’

কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আওয়ামীপন্থী চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

এ সময় আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা প্রদানকারীদের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা।

ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে তারা বলেন, ৫ আগষ্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর বিএসএমএমইউর বর্তমান প্রশাসন ও সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য আওয়ামী দোসর শিক্ষক, চিকিসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছে। এ সময় তারা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, বিগত ১৬ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। সুপার স্পেশালাইজড হাসাপতাল প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন সেন্টার নির্মানে ভয়াবহ দুর্নীতি করা হয়েছে। এর ফলে এগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ২০০৬ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের হয়রানী, চাকরিচ্যুতি, পদাবনতি ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের বাধা প্রদান করা হয়েছে। বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

পদোন্নতি বৈষম্যের কথা তুলে ধরে চিকিৎসকরা বলেন, প্রায় ২৭৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিকভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিপরীতে তাদের থেকে কম যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মেধাশূন্য করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না দিয়ে শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি করা হয়েছে যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, রিএজেন্ট ও ওটি সরঞ্জামাদি ক্রয়ে গুণগত মান যাচাই-বাছাই না করে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আরও পড়ুন

৬ মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন

এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো:

১. আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসাসেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা প্রদান করেছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসি-র রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. গত ১৬ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে এবং সকল কেনা-কাটা, টেন্ডার ও নির্মানে অনিয়মের তদন্ত করে বিচার করতে হবে।

৩. এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ফ্যাসিবাদি সরকারের কারণে যে সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী চাকরিচ্যুত, পদাবনতি ও বরখাস্ত হয়েছেন তাদেরকে স্ব-স্বপদে বহালের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জনে যে বৈষম্যমূলক বাধা প্রদান করা হয়েছে তা দূর করতে হবে।

৪. বৈষম্যের শিকার সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীগণকে অতি দ্রুত ভূপাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে।

৫. বিগত ৪ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সাবেক উপাচার্যের একান্ত সচিব এবং সাবেক প্রক্টরের নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী পরিকল্পিতভাবে শাহবাগের আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ আক্রমণ করে বহু ছাত্র-জনতাকে হতাহত করে এবং আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও ভস্মীভূত করার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা ও মামলা দায়ের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত থেকে শুরু করে স্বৈরাচার কর্তৃক নিয়োগকৃত সকল ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরদের এবং অন্যান্যদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের হিসাব দুদকের মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৭. সুপার স্পেশালাইজড হাসাপাতাল ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা কনভেনশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে অতিসত্ত্বর মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

৮. বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের আতুরঘর হিসাবে বিবেচিত মুজিবাদ প্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অনতিবিলম্বে পরিবর্তন ও ৫ আগষ্টের বিপ্লবের চেতনাবিরোধী সকল মূরাল ও মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে।

৯. এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরে সংঘঠিত সকল অনিয়ম, দুর্নীতির ও বৈষম্য তদন্তে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ ‘তদন্ত কমিশন' গঠন করতে হবে।

১০. ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসদের পদোন্নতি সংক্রান্ত ২০০৮ সালের প্রজ্ঞাপন ২০০৯ সালের ৩৩তম সিন্ডিকেট সভায় বাতিল করার আদেশটি অনতিবিলম্বে বাতিল করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লবসহ অন্যান্য চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচ/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর