# গত বছরের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি কমেছে ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ।
# চলতি বছরে মৃত্যু কমেছে ৮১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
# রাজধানীতে রোগী ভর্তি ও মৃত্যু হার বেড়েছে।
# বছরের বাকি সময়ে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা।
টানা কয়েক বছর দেশের স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর। সরকারিভাবে স্বীকার করা না হলেও ২০২৩ সালে যা মহামারি আকার ধারণ করে। একইসঙ্গে ওই বছর ঢাকা মহানগরী কেন্দ্রীক ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় কমে আসলেও উদ্বেগ কাটছে না। বরং বছরের বাকি সময়টায় পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ২০৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার ১৪৮ জনের। বিপরীতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ৮১০ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২১০ জন। এ হিসেবে ২০২৪ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ কমে গেছে। একইসঙ্গে মৃত্যু কমেছে ৮১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এ অবস্থায় ডেঙ্গুর সংক্রমণকে ওয়েভের সঙ্গে তুলনা করে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু কম হলেও তা উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের সামনের দিনগুলোতে এ পার্থক্য কমে আসতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান এখনও উদ্বেগজনক বলে মত তাদের।
বিজ্ঞাপন
রাজধানী ও বাইরের পরিসংখ্যান যা বলছে
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার তথ্য মতে, ২০২৩ সলের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৯১ হাজার ৮ জন। যা মোট আক্রান্তের ৩৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একই সময়ে চলতি বছরে এ সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০১ জন, শতকরা হিসেবে যা ৪৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ঢাকা মহানগরে হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে মৃত্যুর হারও। গত বছরে ঢাকা মহানগরে ৭১৭ জনের মৃত্যু হয়। যা মোট মৃত্যুর ৬২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। চলতি বছরে সংখ্যাটি ১৪৪ জন, যা মোট মৃত্যুর ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
অপরদিকে গত বছর ঢাকার বাইরে ভর্তির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৬ জন। চলতি বছরে তা ২৪ হাজার ১৬৯ জন। শতকরা হারে গত বছর ৬১ দশমিক ৩০ শতাংশ রোগী ছিল ঢাকার বাইরের। এ বছর তা ২৪ হাজার ১৬৯ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৫৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়াও ঢাকার বাইরে মৃত্যু হারও কমেছে। ২০২৩ সালে ঢাকার বাইরে মৃত্যু হয় ৪৩১ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৩৭ দমিক ৫৪ শতাংশ। আর এ বছর ঢাকার বাইরে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি বছরে ঢাকার বাইরে মৃত্যু তুলনামূলক কম।
শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, চলতি বছর আক্রান্ত কম বলাটা মুসকিল। গত বছরের তুলনায় এই মাস পর্যন্ত কম বলা যায়। ডেঙ্গুর মৌসুম এখন আর আগের মতো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে নেই। আগামী দিনগুলোতে তা আরও বাড়তে পারে। পরিস্তিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে চলতি বছরে কম কিন্তু তার সঠিক কারণ বলাটাও কঠিন।
ঢাকায় রোগী কম থাকলেও অধিক মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কারণ হয়তো বাইরে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে রোগী বেশি হলেও এলাকাভিত্তিক রোগীর সংখ্যা কম। ফলে চিকিৎসা দেওয়াটা সহজ হচ্ছে। আগে রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা জটিল তারা ঢাকায় ভালো চিকিৎসার আশায় চলে আসছে। তাদের অনেকের পথেই মৃত্যু হচ্ছে, আবার হাসপাতালে এসে মৃত্যু হচ্ছে। এটা রাজধানীতে মৃত্যুর সংখ্যাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ঢাকা মেইলকে বলেন, ডেঙ্গু ঢেউয়ের মতো। গত বছর একটা বড় ঢেউ গেছে, এ বছর একটু কম হবে। এখানে আরও একাধিকবার আক্রান্ত হওয়া, শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়াসহ বেশ কিছু ফ্যাক্ট আছে। কিন্তু ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর পরিস্থিতি উদ্বেগের। সেখানে অধিক নজর দিতে হবে।
এমএইচ/এমএইচএম