সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২২, ০৫:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

দেশে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। সচেতনতার অভাব ও শনাক্ত না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এই রোগের বাহক ও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নীরব এই ঘাতকটি থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে।

থ্যালাসেমিয়া মোকাবিলায় সামাজিক বিপ্লব প্রয়োজন উল্লেখ করে বিয়ের আগে এই রোগের পরীক্ষা করার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রোববার (৮ মে) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে বর্তমানে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসায় থ্যালাসেমিয়ায় রোগীদের সম্পূর্ণ সুস্থ করা কঠিন। এমনকি বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মাধ্যমেও তা বজায় রাখা যায় না। এ অবস্থায় সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের রোগীর সংখ্যা কমাতে প্রয়োজনে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্য সংযোজন করতে হবে।

থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয় জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে সে সংখ্যা আরও বেশি। দেশে এর চিকিৎসা ও ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সুযোগ কম। তাই এই রোগকে প্রতিরোধ করতে হবে।

শিশু হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এ রোগের চিকিৎসার চেয়ে সচেতনতা অনেক বেশি জরুরি। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা যেনো ভালোভাবে চিকিৎসা নিতে পারে সেজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’


বিজ্ঞাপন


থ্যালাসেমিয়া সেন্টারের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা হাসপাতালে ভর্তি থ্যালাসেমিয়া রোগীর পেছনে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করি। আমরা নামমাত্র খরচে তাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আমিরুল মের্শেদ খসরু বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়ায় চিকিৎসার থেকে জরুরি হলো প্রতিরোধ। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি থ্যালাসেমিয়ার রোগী ছিল। তারা এখন তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ইরানে একটা ম্যারেজ কাউন্সিলর করে রেখেছে, বিয়ের আগে সেখানে থেকে অনুমতি নিতে হয়।’

‘বাংলাদেশের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি। বিয়ে করার আগে শুধু একজন ম্যারেজ কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়ে বিয়ে করলে, ১০ বছর পর দেখা যাবে ৫০ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগী কমে গেছে। আমরা ১৮ কোটি মানুষের পরীক্ষা করতে পারবো না। শুধু বিয়ের আগে জেনে বিয়ে করলেই ভবিষ্যতে এই রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে’।- যোগ করেন অধ্যাপক আমিরুল।

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ম্যারেজ কাউন্সিলরের অনুমতি ছাড়া যদি বিয়ে না হয় তবে থ্যালাসেমিয়া অনেকটাই কমে যাবে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রেম হয়ে গেলে কেউ আর দেখবেনা যে থ্যালাসেমিয়া রোগী কি না। এর জন্য প্রয়োজনে মাধ্যমিক কিংবা প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা করতে হবে। দেশের এত এত থ্যালাসেমিয়া রোগীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র সচেতনতার।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাসপাতালটির পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আফিকুল ইসলাম, সিএমএইচ হাসপাতালের অধ্যাপক কর্নেল (অব.) ডা. শরমিন আরা ফেরদৌস, শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মো. বেলায়েত হোসেন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নিলুফার আখতার বানু চৌধুরী ও ডা. আব্দুল ওহাব প্রমুখ। এছাড়া একাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগী অনুষ্ঠানে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

এমএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর