মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শীতজনিত রোগের প্রকোপ

সর্দি-কাশি, স্বরভঙ্গে নাকাল দেশবাসী

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

সর্দি-কাশি, স্বরভঙ্গে নাকাল দেশবাসী

প্রকৃতিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দেখা মিলছে শীতের আগমনি বার্তা। এর সাথে সাথে ঘটছে দিন রাতের তাপমাত্রার তারতম্যও। আর এতেই দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে ঋতু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ রোগ। মায়ের কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কম বেশি ভুগছেন ঋতু পরিবর্তনজনিত জ্বর, সর্দি, কাশি ও স্বরভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যায়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন ও বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণের পরেও কেউ কেউ সপ্তাহের অধিক সময় ভুগছেন এসব সমস্যায়। আবার কারো দুই-একদিনেই সেরে যাচ্ছে।

তেমনই একজন রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা জসীম উদ্দিন। একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে কর্মরত পঁচিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি এক সপ্তাহেরও অধিক সময় সর্দি জ্বরে ভুগেছেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর শরীর দুর্বল অনুভব করছিলাম। সাথে জ্বর জ্বর লাগছিল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি গলা বসে গেছে, সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে গেছে। ওইদিন অফিসে থাকা অবস্থাতেই জ্বর বাড়ল। দ্রুত বাসায় চলে এসে সাধারণ প্যারাসিটামল ওষুধ খেলাম। ওই সময় জ্বর কমে গেলেও সর্দি থেকে গেল। পাশাপাশি দেখা দিলো এবং গলার স্বরভেঙে গেল। পরদিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে জ্বর থাকলে প্যারসিটামল, সর্দির জন্য ফ্যাক্সো ও কাশি থাকলে বাসক (কাশির সিরাপ) খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। পরবর্তী সময়ে জ্বর তেমন একটা না থাকলে সর্দি-কাশি ও গলার স্বরভাঙা সমস্যা এখনও ভুগাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আমানের ক্ষেত্রেও রোগের ধরন একই। তিনিও সপ্তাহের অধিক সময় এসব সমস্যায় ভুগছেন। দিনে গরম থাকায় রাতে উচ্চ গতিতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমান তিনি। সকালে ঘুম ভাঙে গলা বসে যাওয়া অবস্থায়। পরে একে একে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। জ্বরের মাত্র অত্যন্ত কম থাকলেও দীর্ঘদিন ভুগেছেন সর্দি-কাশি ও স্বরভেঙে যাওয়া সমস্যায়। তবে শুধু তিনি না। তার মা এবং তিনবছর বয়সী ভাতিজিও একই সমস্যায় ভুগেছেন।

পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি হঠাৎ করে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলাম। এর মাঝেই জানতে পারলাম আমার মা ও ভাতিজি জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। মায়ের গলার স্বর ভেঙে গেছে। তিনি এক সপ্তাহের অধিক সময় কাশির সমস্যার ভুগছেন। আর ভাতিজিকে সাময়িক সময়ের জন্য হাসাতাপালে নিতে হয়েছিল।

তবে এর ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকার আরিফুজ্জামান বলেন, দিনের বেলা একটা ভ্যাপসা গরম থাকে। আবার শেষ রাতের দিকে ঠান্ডা পড়ে। এ অবস্থায় আমার সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দেয়। তবে দুইদিন প্যারসিটামল ও ফেক্সো খাওয়ার পর তা সেরে গেছে। 

ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে সর্দি জ্বরের ঘটনা স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ধরনের অসুস্থতা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের দিকে এ নজর দেওয়ার পরামর্শ তাদের। একইসঙ্গে দেশজুড়ে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে এবং করোনায় আক্রান্ত হওয়ারও একটা সম্ভাবনা রয়েছে তাই লক্ষণ অনুযায়ী সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা।


বিজ্ঞাপন


স্বাভাবিক, তবে সতর্কতার বিকল্প নেই

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঋতু পরিবর্তন চিরন্তন। এ সময়ে এ ধরনের অবস্থা হয়েই থাকে। সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। অপ্রয়োজনের বাইরে যাওয়া যাবে না। কেননা রাজধানীসহ সরাদেশেই বায়ু দূষণ রয়েছে। ফলে অসুস্থতা ছড়াচ্ছে। আর এ সময়ে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কম ফ্লো-এর সংক্রম ঘটে। পাশাপাশি ডেঙ্গু ও করোনাও হচ্ছে। তাই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথমত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘুরাফেরা না করা উত্তম। যে বা যারা এসব সমস্যায় ভুগছেন তারা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করবে। বাইরের ফাস্টফুড ও ভাজাপুড়া জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না। এ ধরনের সমস্যা বয়স্ক ও শিশুদের জটিল আকার ধারণ করতে পারে। শিশুদের এ সময় বুকে ভাইরাল ইনফেশন দেখা দেওয়া সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া যারা ধূমপান করেন, যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যেও জটিল হতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে লক্ষণ অনুযায়ী ডেঙ্গু ও করোনার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। 

গলার স্বরভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটিও স্বাভাবিক। ঠান্ডা থেকে এ রকম হচ্ছে। এ অবস্থায় গরম পানি দিয়ে গড়গড় ভালো উপাকারী হতে পারে। 

এমএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর