সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

দেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার প্রায় ৮ কোটি মানুষ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দেশে গণপরিবহনসহ জনসমাগমস্থলে প্রায় আট কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে থাকেন। আর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণে বছরে দেশের প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তামাকজাত পণ্যের কারণে। এজন্য বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। তাই অকাল মৃত্যু ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সংগঠনসহ বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরিসহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার বলেও মনে করেন তারা।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস এর আয়োজনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন


বক্তারা বলেন, অসংক্রামক রোগ এবং অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে এবং স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন নিশ্চিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশে মাদকের সহজলভ্যতার পেছনে ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার অন্যতম বড় কারণ। সুতরাং তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন শক্তিশালী ও বাস্তবায়ন, ট্যাক্স বৃদ্ধি, সিএসআর নিষিদ্ধসহ বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাকবিরোধী কাজে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য তুলে ধরা। তামাক ও ধূমপানের প্রকৃত সত্য গণমাধ্যমে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এতে তারা প্রভাবিত হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

মূল প্রবন্ধে মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, দেশে প্রায় তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। প্রায় আট কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হয়। ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ হলো তামাক সেবন। যা স্বাস্থ্য খাতে চাপ বাড়িয়েছে। তামাকের কারণে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন হুমকিতে রয়েছে।

এসময় তিনি মূল প্রবন্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্ত, ই-সিগারেট, ভেপ ইত্যাদি আমদানি, বিপণন, ব্যবহার নিষিদ্ধ করাসহ আরও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ প্রনয়ন করে সরকার এর ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮ শতাংশ ব্যবহার কমে আসে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার নির্মূলে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, উন্নত দেশগুলোতে তামাক ক্রমান্বয়ে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে তামাকের ব্যবসা বাড়ানো হচ্ছে। দেশের অনেক আইন প্রণেতা তামাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তাদের লবিং রয়েছে। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন।

একইসাথে গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, তামাকবিরোধী আইন আছে আবার নেই। আইনে আছে শিশুদের কাছে তামাক বিক্রি করা যাবে না, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে। আইনে বলা আছে প্রকাশ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা যাবে না কিন্তু করা হচ্ছে। এর কারণ হলো আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। আমাদের এই দ্বৈত আচারণ বন্ধ করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে, এটার জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ১৮ বছরের নিচে কারো কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না, এটা আমরা কতজন জানি? অনেকেই জানি না। আইন প্রয়োগ করবে যারা তাদেরও অনেকে জানেন না। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন করতে হবে।

ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর পরামর্শক মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনী কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ জরুরি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। সকলের সহযোগিতায় দেশ তামাকমুক্ত হবে।

উম্মে জান্নাতের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর