নানা অভিযোগে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড ও কনসালটেশন সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে গত ২০ সেপ্টেম্বর তালা ঝুলিয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধভাবে অভিযানকে চালিয়েছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি দখলের প্রচেষ্টার অভিযোগ করে তারা। এ অবস্থায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে অভিযান ও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য অধিদফত জানায়, সারাদেশে অবৈধ, লাইসেন্সবিহীন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ‘The Medical Practice and Private Clinics and Laboratories Regulation Ordinance 1982 অনুযায়ী এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে:
১. লাইসেন্স বিহীনভাবে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম পরিচালনা করা যা নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন-২০০২ এর ধারা ১৮(১) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ;
২. মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহার করা;
বিজ্ঞাপন
৩. সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায়;
৪. মেডিকেল চেকআপ সেন্টারের লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও বিদেশগামী যাত্রীদের পরীক্ষার সনদ প্রদান করা;
৫. হাসপাতালের লাইসেন্স ব্যতীত জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখা;
৬. অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন জনবল দিয়ে ল্যাবরেটরিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং রোগীদের ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারিত করা;
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো:
গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শন দল প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনকালে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি, মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্মারক নং-স্বা: অধি:/হাস:/বিবিধ/২০২৩/৯২৬ মূলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ এবং লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা ও কার্যক্রম বন্ধ করার কারণে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট রিটপিটিশন = ৬৫৬১/২০২৩ দায়ের করে। প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা ও কার্যক্রম বন্ধ করার কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আপিল আবেদন করে এবং আপিল নিষ্পত্তি করা হয় আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে।
আদালত রুলটি খারিজের জন্য তারিখ ঘোষণা করলে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ সময়ের আবেদন করে। পরবর্তী সময়ে সম্পূরক জবাব দায়ের করলে আদালত মূল কোর্টের জন্য নির্দেশনা দেন এবং সাত দিনের মধ্যে প্রার্থীর আবেদন নিষ্পত্তির জন্য রুল জারি করেন।
পরবর্তী সময়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট অন্য আদালতে পুনরায় ১২১২৬/২০২৩ রিট পিটিশন দায়ের করে। আদালতের নির্দেশনার কারণে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ১৯ সেপ্টেম্বরে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অবহিত করে। এরপর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কে আপত্তিকর, মানহানিকর বক্তব্য দিচ্ছে।
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবৈধ, লাইসেন্সবিহীন অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। এটি ‘The Medical Practice and Private Clinics and Laboratories Regulation Ordinance 1982, অনুযায়ী চলমান রয়েছে। এই আইনের আওতায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে যাতে জনগণ হয়রানির শিকার না হয়। চলমান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে মোট দুই হাজার ৮৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব অভিযানে মোট ৪৯ লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মোট ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে এবং ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
এমএইচ/জেবি

