সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিবছর রেটিনা পরীক্ষার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

BSMMU
বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় বিএসএমএমইউ উপাচার্যসহ অন্যরা। ছবি: ঢাকা মেইল

পৃথিবীতে অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। দীর্ঘদিন ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন, সেসব রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই কমতে থাকে। এ অবস্থায় রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বছরে অন্তত একবার চোখের রেটিনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে এই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটি যৌথভাবে ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে বলা হয়, পৃথিবীতে যেসব কারণে অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। এমনকি ডায়াবেটিসের প্রভাবে রোগী অন্ধত্ববরণও করতে পারেন, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। যার যত বেশিদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে, তার রেটিনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি। দীর্ঘদিন ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন, তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই কমতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো রোগ। কারও ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিস থাকলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগটি একেবারে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে বিশেষ কিছু করার থাকে না।


বিজ্ঞাপন


ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ তুলে ধরে সেমিনারে আলোচকরা বলেন, রোগটির লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- চোখে ঝাপসা দেখা, চোখের সামনে ভাসমান কিছু দেখা, দৃষ্টিসীমানার যেকোনো অংশ কালো দেখা, আস্তে আস্তে (একসঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখ) দৃষ্টি কমে যাওয়া। এতে ভিট্রিয়াসে রক্তপাতের কারণে হঠাৎ করে এক চোখ দৃষ্টিহীন হতে পারে, রেটিনায় পানি জমে ফোলার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, দেখতে অসুবিধা, রং আলাদা করতে অসুবিধা, চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে ব্যথা অনুভব, দৃষ্টিহীনতা ইত্যাদি।

BSMMU
বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার একটি মুহূর্ত। ছবি: ঢাকা মেইল

এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত প্রতিবছর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা রেটিনা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম ছাড়াও নিয়মিত ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকা, এমনকি ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমেও এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

রোগটি ধরা পড়লে রোগীদের করণীয় জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ধরা পড়লে তা একদম সারানো যায় না। তবে নিয়মিত চিকিৎসা, থেরাপি ও পরীক্ষার মাধ্যমে চোখের ক্ষতি এড়ানো যায়। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি গুরুতর পর্যায়ে গেলে অপারেশন বা লেজার থেরাপি ছাড়া উপায় থাকে না। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।

 

আরও পড়ুন

'ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বেশি গুরুত্বপূর্ণ’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগে চোখের সব ধরণের রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা রয়েছে। যেকোনো দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের অনেক ক্ষতি হয়। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত।

 

এর আগে ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, অযত্নে বাড়ে চোখের ক্ষতি’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নানা আয়োজনে বিশ্ব রেটিনা দিবস-২০২৩ পালনের অংশ হিসেবে বিএসএমএমইউতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ব্লকের সামনের শেখ রাসেল ফোয়ারা থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।

দিবসটিকে ঘিরে আয়োজিত কর্মসূচিগুলোয় অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আবুল বাশার শেখ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির সহ-সভাপতি ডা. তারিক রেজা আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির মহাসচিব ডা. শাহানুর হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর