রাজধানীর বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবৈধভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযানকে চালিয়েছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ।
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার আসফাকের অভিযোগ, মূলত দখলের জন্যই একটি চক্র প্রশাসনকে দিয়ে বন্ধ করার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বনানীর ওই প্রতিষ্ঠানটির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেন- উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে ‘অবৈধভাবে’ বন্ধ থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শনের নামে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আসফাক অভিযোগ করেন, বনানীর ডায়াগনেস্টিক সেন্টারটি গত ১৬ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ৬ কোটি টাকা দলিলমূল্যে জায়গাটি কিনে নেয় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ এই সম্পত্তির দাম ৪৫ কোটি টাকার বেশি। নামমাত্র মূল্যে এই সম্পত্তি কিনে নিলেও বাড়ি ছাড়ার কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি, বরং তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ব্যবহার করে এই প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি জানান, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি দল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে। পরে একই মাসের ২২ তারিখ পূর্বের তারিখ দেখিয়ে একটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য ছাড়াও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণকে হয়রানি, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিযোগ আনা হয়। এরপর ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ ছাড়াও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বিজ্ঞাপন
তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আপিল করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয় বলেও অভিযোগ প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসফাকের। তিনি বলেন, আপিল অগ্রাহ্য করার পর নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। এরপর আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। তবে রিটটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এরপরও তারা আজ (বুধবার) আবার এসে বন্ধ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে আবারও তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়।
খন্দকার আসফাক বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করতে একের পর এক নোটিশ দেওয়া হচ্ছিল। এরমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি নিজে থেকেই কার্যক্রম বন্ধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। অথচ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকজন প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে বলেও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি টিম ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে যায় এবং তড়িঘড়ি করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই সময় অভিযানের খবরে সাংবাদিকরা সেখানে ছুটে গেলে তারা ছবি ও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে। তবে ওই সময় সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও ধারণে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে তারা চলে যান।
অন্যদিকে, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘অনিবার্য কারণবশত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড সাময়িক বন্ধ থাকবে।’ তবে কোন কর্তৃপক্ষ নোটিশটি ঝুলিয়েছে সে বিষয়ে এতে কিছু উল্লেখ নেই।
প্রসঙ্গত, বনানীর এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ২০০ কর্মচারী ছাড়াও ৫০ জন চিকিৎসক-পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে বিভিন্ন রোগ পরীক্ষা-নির্ণয়, গুণগত ওষুধ বিক্রি ছাড়াও নানা রোগের পরামর্শকরা রোগীদের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। সবশেষ ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট ঔষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মাঝে থাকা ‘মডেল ফার্মেসি’র উদ্বোধন করেন বলে একটি নামফলকে উল্লেখ রয়েছে।
এমআইকে/আইএইচ

