রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর রোডে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লি. ও কনসালটেশন সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তালা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হঠাৎ করে এই অভিযান চালানো হয়। পরে তড়িঘড়ি করে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা দ্রুত চলে যান। এ বিষয়ে তারা গণমাধ্যমের সাথে কোনো ধরনের কথা বলেনি। উল্টো ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, খান ভিলা নামে সেই ভবনে প্রতিষ্ঠানটি চালানো নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এর মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে এবং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অভিযান চালিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
বুধবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে সেখানকার কর্মচারীরা জানান, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে। সুনামের সাথে কাজ করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদফতর থেকে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় আশপাশে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়নি। কিন্তু তারা কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া সেখানে অভিযান চালানোয় প্রশ্ন উঠেছে।
প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে প্রায় ২০০ কর্মচারী ও ৫০ চিকিৎসকের সমন্বয়ে ওষুধ বিক্রি, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রোগ সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে আসছিল।

বিজ্ঞাপন
ঘটনাস্থলে ওই সময় উপস্থিত থাকা লিটন মাহমুদ নামে এক গণমাধ্যমকর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা অভিযানের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই। ওই সময় সংবাদকর্মীরা ভিডিও ও ছবি ধারণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আসা ভ্রাম্যমাণ আদালতের লোকজন কোনো ছবি-ভিডিও ধারণ করতে দেয়নি উল্টো তারা ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এ সময়ে বাহিরের এক ব্যক্তি ঘটনা ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করলে তাকে ধরে নিয়ে যায়। অবশ্য পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আসা ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমের নেতৃত্ব দেন ইরতিজা হাসান নামে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে সেখানে গিয়ে আর পাওয়া তাকে যায়নি।
প্রতিষ্ঠানটির এমডি খন্দকার আশফাক ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখলে নিতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগসাজশ করে অভিযানের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খন্দকার আওয়াল ঢাকা মেইলকে বলেন, তারা কোনো নোটিশ করেনি। হঠাৎ এসেই কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অবৈধভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার উপ-পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, গত ১৮ মে হাসপাতালটিকে সাময়িক বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অনুমোদন ছাড়াই ব্লাড ট্রান্সমিশন, বিদেশগামীদের মেডিকেল টেস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এসব কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিফাইড কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নেই। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। আজসহ এখন পর্যন্ত মোট ৬ থেকে ৭ বার হাসপাতালটিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গিয়েছেন। আজ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিও ছিল।
এমআইকে/এএস

