বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এবং রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্তের বড় অবদান রয়েছে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং সে জন্য তিনি ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ চালু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব এফেরিসিস সচেতনতা দিবস, ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ আয়োজিত ওই সভায় এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে জটিল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার তথ্যও তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের এফেরেসিস ইউনিট বিগত ১০ বছর ধরে রক্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবাসমূহ প্রদান করে আসছে। এরমধ্যে এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ করে যেসব ডেঙ্গু রোগীর এফেরেসিস প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়। এই বিভাগ থেকে করোনাকালীন সময়ে কনভালেসেন্ট প্লাজমা সংগ্রহ এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও বন্ধ্যাত্বসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য স্টেম সেল সংগ্রহ ও চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করছে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ। এই বিভাগের মাধ্যমে লিভার ডায়ালেসিস সেবা এবং থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএসএমএমইউয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের এফেরেসিস ইউনিটের সেবা পাওয়া রোগের মধ্যে রয়েছে, গুলেন বারী সিনড্রম, মাইয়েসথেনিয়া গ্রেভিস, রেনাল এলোগ্রাফট রিজেকশন, এসএলই উয়িথ আরপিজিএন, ক্রোনিক ইনফ্লামেটারি ডিমাইলেটিং পলিনিউরোপ্যাথি, ট্রান্সভারস মাইলাইটিস, মাল্টিপোল মাইলোমা, ফ্যামেলিয়ার হাইপারলিপিডিমিয়া, এটিপিক্যাল হিমোলাইটিক ইরেমিক সিনন্ড্রম, ডিকমপেনসেটেট লিভার সিরোসিস, থ্যাইমোমা, সিকেল সেল ডিজিস, গ্রেভস ডিজিস এবং এ্যাকুট অন ক্রোনিক লিভার ডিজিস।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, প্রতিটি দিবসের উদ্দেশ্য থাকে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ উদ্বোধন করেছিলেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্তের বিরাট অবদান রয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু জনসাধারণের রক্তদানে যেমন এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। একইসঙ্গে রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেছিলেন।
রক্ত নিয়ে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা বর্তমানে রক্ত নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছেন। যার কারণে রক্তের মাধ্যমে বর্তমানে অনেক জটিল জটিল রোগের সেবা বাংলাদেশেই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই গবেষণার সুফল হিসেবে রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমন সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই, বরং রক্তদানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। বিএসএমএমইউতে নিরাপদ রক্তদানের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্যদের মধ্যে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, এই বিভাগে আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সংযোজন করা হচ্ছে। যার ফলে রক্তরোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
এর আগে এফেরেসিস সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য ওই র্যালির উদ্বোধন করেন। পরে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ক্লাসরুমে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, আমেরিকান সোসাইটি ফর এফেরেসিস প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার বিশ্ব এফেরেসিস সচেতনতা দিবস পালন করার নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। এফেরেসিস ডোনার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে দিবসটি পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হলো।
এমএইচ/আইএইচ

