নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে বাতের ব্যথা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন মাহফুজা বেগম (৭৩)। দীর্ঘদিনের ব্যথা হওয়া তার ইচ্ছা এই হাসপাতালের একজন অধ্যাপককে বিষয়টি দেখাবেন। কিন্তু এখানে এসে জানলেন সকালে বহির্বিভাগে ৩০ টাকার টিকেটে কোনো অধ্যাপক রোগী দেখেন না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে বিকেল পর্যন্ত। পরে ২শ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে বহির্বিভাগ ১নং ভবনের রিউমাটোলজি (বাতরোগ) বিভাগের নির্দিষ্ট কক্ষের (৪১০) সামনে অপেক্ষা করেন।
বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিসের ক্ষেত্রে বেলা ৩টা থেকে রোগী দেখা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ওই কক্ষের (৪১০) নির্ধারিত চিকিৎসক প্রফেসর আবু শাহীন এলেন বেলা সাড়ে ৩টায়। বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক লাইনে দাঁড়ানো প্রথম দুজন রোগীকে দেখেন এবং এতে সময় নেন মাত্র ৭ মিনিট। ৩টা ৩৭ মিনিটে কক্ষ ত্যাগ করেন ডা. আবু শাহীন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রোগী মাহফুজা বেগমের সাথে আসা তার ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আশা ছিল ঢাকায় এসে একজন প্রফেসর দেখানোর। তাও হলো না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুপুর আড়াইটায় টিকিট পাই। ৩টায় ডা. আবু শাহীন স্যার আসার কথা থাকলেও আসেন সাড়ে ৩টায়। তারপর ৭ মিনিটে দুইজন রোগী দেখেই চলে যান। পরে তার সহযোগী যারা চেম্বারে ছিলেন তাদের কাছেই মাকে দেখাতে হয়েছে।
রিউমাটোলজি (বাতরোগ) বিভাগের বৈকালিক স্পেশালাইজড সেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মাসে কেউ একদিন কেউবা দুইদিন বসেন। এরমধ্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বসেন আবুল খায়ের আহমেদুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম, আবুল খায়ের আহমেদুল্লাহ, আরিফুল ইসলাম, সৈয়দ জামিল আব্দাল, শামীম আহমেদ। অধ্যাপক হিসেবে বসেন শামীম আহমেদ, মিনহাজ রহিম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম, আবু শাহীন, মিনহাজ রহিম চৌধুরী। যাদের প্রায় সবারই বিকেলের চেম্বারে অনীহা। কেউবা স্বল্পসময় চেম্বারে বসেন। স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস বলা হলেও তা দিয়ে থাকেন মূলত সহযোগী শিক্ষানবীশরা।
মাত্র সাত মিনিট রোগী দেখে কোথায় গেলেন অধ্যাপক আবু শাহীন— তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। জানা যায়, এসময় তিনি নগরীর পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। সেখানে তার ভিজিট ৩ হাজার টাকা। এছাড়া একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রাইভেট চেম্বারে তিনি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের এক স্টাফ ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএসএমএমইউতে বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সেবা অনেকটা ঠগবাজি। হাতেগোনা কয়েকজন ডাক্তার ছাড়া কোনো প্রফেসরই ঠিকমতো চেম্বারে বসেন না। আসেন নিজেদের ইচ্ছামতো, কিছু সময় থেকেই বেরিয়ে যান। রোগী দেখেন মূলত সকালের ডাক্তার কিংবা অধ্যাপকের সহযোগীরা। কেউ অধ্যাপককে দেখাতে চাইলে আমরা তার প্রাইভেট চেম্বারের ঠিকানা দিয়ে দেই।
যার সত্যতাও মিলেছে বৈকালিক সেবা নিতে আসা রোগীদের কাছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন জমির শেখ। বলেন, শুরু থেকেই গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ হাজার টাকা ভিজিটে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তারকে আর্থিক অবস্থার কথা জানানোর পর তিনি বিএসএমএমইউতে আসতে বললেন। যুদ্ধ করে একটা টিকিট পেলেও ডাক্তারের রুমের ছেলেটি জানালেন জরুরি কাজে ডাক্তার চলে গেছেন। আসবে কিনা জানা নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকালে ৩৯টি বিভাগে চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। এর কয়েকটি ছাড়া সব বিভাগেই বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস চালু রয়েছে।
বৈকালিক এই সেবা পাওয়া যায় সপ্তাহে চারদিন— রবি, সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার। যেখানে একটি টিকিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। সিরিয়াল দিতে হয় ভোরে। বিকেলে বিভাগ প্রতি প্রথম ১০-১৫ জনকে দেওয়া হয় ২০০ টাকা মূল্যের টিকিট। এছাড়া পুরাতন রোগীদের মধ্যে সুযোগ পান ১০ জন। সবমিলে বৈকালিক বিশেষজ্ঞ সেবা পান সর্বোচ্চ ২৫-৩০ জন।
বৈকালিক বিশেষজ্ঞ সেবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছেন মূলত তাদের সহযোগী শিক্ষানবীশরা। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেন এই প্রতিবেদক। পরে তার কার্যালয়ে কথা বলার সুযোগ মেলে। সার্বিক বিষয় শুনে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমার মন্তব্য করার অনুমতি নেই।
হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না থাকলে কে বলবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাকে এখানে এসব বলার জন্য বসানো হয়নি। যা বলার বলবেন মিডিয়া সেল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা (অতি. দায়িত্ব) প্রশান্ত কুমার মজুমদার জানান, আজ আর ভিসি স্যারকে পাওয়া যাবে না।
সবশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিডিয়া সেল প্রধান সমন্বয়ক ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুবের রুমে গেলেও পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত অফিস সহকারী জানান, ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুব আজ অফিসে আসার সম্ভাবনা নেই।
ডিএইচডি/জেএম