রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে দিন দিন বেড়েই চলছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালটিতে চিকিৎসার মান ভালো হলেও সিট সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। শুধু তাই নয়, রোগী সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর এই সুযোগে হাসপাতালটিতে বেড়েছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল ঘুরে এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
মাথা, মেরুদণ্ডসহ স্নায়ুর সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতাল। তাই ব্রেন স্ট্রোক, দুর্ঘটনায় আঘাত, ব্রেন টিউমার ও মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দিলেই ঢাকাসহ গ্রামগঞ্জ থেকে রোগীরা ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। এতে দিন দিন ভিড় বাড়ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিট না পেয়ে রোগীরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বারান্দায় শুয়ে আছেন। পাশে বসে আছেন স্বজনরা। হাসপাতালের ট্রলিতেও শুয়ে আছেন কেউ কেউ।
এ সময় এক রোগীর স্বজন হাসেম মিয়া ঢাকা মেইলকে জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মাগুরা। কয়েকদিন আগে ৭০ বছরের বৃদ্ধ হাসেম মিয়া হেঁটে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছেন। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মাথা, মেরুদণ্ডসহ স্নায়ুর সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এই হাসপাতাল। তাই ব্রেন স্ট্রোক, দুর্ঘটনায় আঘাত, ব্রেন টিউমার ও মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দিলেই ঢাকাসহ গ্রামগঞ্জ থেকে রোগীরা ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। এতে দিন দিন ভিড় বাড়ছে।
স্বজনরা জানান, শনিবার বিকেলে রোগী নিয়ে তারা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আসেন। পরে জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখান। রোগীকে ভর্তি করার জন্য বলা হলেও হাসপাতালে কোনো সিট খালি নেই বলে প্রথমে জানানো হয়। পরে জরুরি বিভাগের সামনেই হাসেম মিয়াকে নিয়ে রাত্রীযাপন করেন স্বজনরা। পরদিন দালাল চক্রের এক সদস্যের মাধ্যমে একটি সিটের ব্যবস্থা হয়।
একই অবস্থা গোপালগঞ্জ থেকে আসা আরিফা বেগম নামে আরেক রোগীর। আরিফা বেগমকে নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে বসে আছেন তার স্বজনরা।
স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ আরিফা বেগমকে নিউরো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে ভালো চিকিৎসার জন্য। আসার পর হাসপাতালে কোনো সিট খালি নেই। এছাড়া ডাক্তার দেখানোর পর অনেকগুলো পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা হাসপাতাল থেকে করানো হলেও সিটি স্ক্যান করা সম্ভব হয়নি। সিটি স্ক্যানের জন্য পরের তারিখ পাওয়া যায়। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে সিটি স্ক্যান করিয়েছি।
শুধু হাসেম মিয়া ও আরিফা বেগমই নয়, প্রতিদিন এমন ভোগান্তির শিকার হাসপাতালে আসা শত শত রোগী। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালে গড়ে উঠেছে দালাল চক্রে। ওই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করানোর জন্য হাসপাতালে অবস্থান করে। আবার কিছু দালাল আনসার সদস্যদের টাকা দিয়ে সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নিউরোলজিক্যাল অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবার প্রতিষ্ঠান এটি। রোগীরা উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে এই হাসপাতালে। প্রতি পাঁচ মিনিটে আসে একজন স্ট্রোকের রোগী। এসব রোগী সামাল দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দালাল চক্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালটি সরকার পরিচালিত একটি পূর্ণাঙ্গ স্নায়ুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে অত্যাধুনিক এই ইনস্টিটিউট চালু হয়। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আদলে নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটে অপারেশন ও চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রতি বছর নিউরোলজি ও নিউরো সার্জারি বিষয়ক উচ্চতর ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে ইনস্টিটিউটটিতে।
কেআর