শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কাজে আসছে না ঢামেকের ই-টিকিটিং

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কাজে আসছে না ঢামেকের ই-টিকিটিং

দেশের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সারাদেশের রোগীদের শেষ ভরসা সরকারি এই হাসপাতালটি। শুধু জটিল রোগী নয়, সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েও হাসপাতালটিতে ভিড় করেন রোগীরা। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ৫ হাজার রোগী নানাবিধ স্বাস্থ্য সেবা নেন।

রোগীর এই চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরতদের যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়। পাশাপাশি রোগীরাও নানা ভোগান্তির শিকার হন। রোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তি দূর করাসহ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ই-টিকিটিং সেবা চালু করেছে হাসপাতালটি। এর মাধ্যমে লাইনে না দাঁড়িয়ে রোগীরা তাদের পছন্দ মতো তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ গ্রহণ করতে পারবেন।


বিজ্ঞাপন


ই-টিকিটিং কার্যক্রম চালুর প্রায় তিন মাস পর গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরে দেখা যায়, সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের সিংহভাগই প্রচলিত পদ্ধতিতে টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। তারা ই-টিকিটিং পদ্ধতির ব্যাপারে জানেনই না। অল্প সংখ্যক মানুষ জানলেও অনলাইনে ই-টিকিটিং বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই।

গত ১৯ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ই-টিকিটিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্রচারণার অভাব এবং স্বয়ংক্রিয় না হওয়ায় বিশেষ এই ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা।


বিজ্ঞাপন


জানেন না বহির্বিভাগের অধিকাংশ রোগী

ই-টিকিটিং কার্যক্রম চালুর প্রায় তিন মাস পর গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরে দেখা যায়, সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের সিংহভাগই প্রচলিত পদ্ধতিতে টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। তারা ই-টিকিটিং পদ্ধতির ব্যাপারে জানেনই না। অল্প সংখ্যক মানুষ জানলেও অনলাইনে ই-টিকিটিং বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই।

তেমনই একজন বরিশাল থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব জমির উদ্দিন। তিনি ভোর সাড়ে ৬টায় ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক দেখাতে ঢামেক হাসপাতালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বহির্বিভাগের কাউন্টার চালুর পর ৮টায় টিকিট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষা করছেন। অনলাইনে টিকিট কাটার বিষয়ে জানেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, না, এমন কিছু তো জানি না। আগেও এমনেই ডাক্তার দেখাইয়ছি। এবারও ছেলেকে নিয়ে আসছি।

পাশে বসে থাকা তার ছেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এই বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।

ই-টিকিটিং নিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ— অনলাইনে টিকিট কাটা ও ফি পরিশোধের পরও হাসপাতালে এসে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আবার অনেকে টিকিট প্রিন্ট করে হাসপাতালে এসে ফি জমা দিচ্ছেন। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি নিরসনে ই-টিকিট চালু করা হলেও সেই ভোগান্তি রয়েই যাচ্ছে।

 বিষয়টি অনেকে জানলেও এখনও পুরাতন পদ্ধতিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এছাড়া ই-টিকিটি নেওয়ার পরও লাইনে দাঁড়াতে হয়, তাই দুইবার ঝামেলা করতে চান না বলেও জানান অনেকে। রাজধানীর মালিবাগ থেকে চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ফয়সাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ই-টিকিটিং বিষয়ে শুনেছি। তবে সাইটে বসে টিকিট কাটা পর আবার তা প্রিন্ট দিয়ে হাসপাতালে আসার থেকে সরাসরি এখানে আসাটাই ভালো মনে হয়েছে।

ই-টিকিট নিয়েও দাঁড়াতে হয় লাইনে!

ই-টিকিটিং নিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ— অনলাইনে টিকিট কাটা ও ফি পরিশোধের পরও হাসপাতালে এসে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আবার অনেকে টিকিট প্রিন্ট করে হাসপাতালে এসে ফি জমা দিচ্ছেন। ফলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি নিরসনে ই-টিকিট চালু করা হলেও সেই ভোগান্তি রয়েই যাচ্ছে।

ই-টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখাতে আসা ইসরাফিল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি আরও দুইদিন আগে অনলাইনে টিকিট নিয়েছি। তবে ‘বিকাশ’, ‘রকেট’ বা ‘নগদে’ ফি পরিশোধের সুযোগ থাকলেও হাসপাতালে এসে টাকা জমা দিয়েছি। এরপরও আমাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। কারণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের খাতায় এটি এন্ট্রি করতে হয়। সেখান থেকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও সিরিয়াল নম্বর দেয়। সেই অনুযায়ী চিকিৎসক দেখেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এন্ট্রির দায়িত্বরত ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, অনলাইন-অফলাইন একই। শুধু এইটুকু যে তারা বাসায় থেকে টিকিটটা নিচ্ছে। অনলাইনে টিকিট নিলেও এনালগ পদ্ধতিতে আমাদের এখানে এন্ট্রি করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন নম্বর আমরা এখান থেকে দেই।

যা বলছেন হাসপাতালের পরিচালক

জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা একদম শুরুর থেকে বর্তমানে তুলনামূলক ভালো সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু বহির্বিভাগে রোগীর লাইনে দাঁড়ানোর চাপ কমেনি। প্রতিদিন গেড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী অনলাইনে টিকিট কাটছে। যদিও প্রতিদিন আমাদের এখানে রোগী আসেন প্রায় ৫ হাজার। এ অবস্থায় যদি ২ হাজার লোক অনলাইনে টিকিট কাটতো তাহলে বলা যেত যে এটি ভালো ফল দিচ্ছে।

ই-টিকিট নিয়েও পুনরায় হাসপাতালে এসে এন্ট্রি করার সমস্যা সমাধান করার বিষয়টি দেখবেন বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।

এছাড়া প্রচারে ঘাটতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আসলে যতটা প্রচার করা প্রয়োজন ছিল, আমরা তা করতে পারিনি। ঠিকভাবে প্রচার চালাতে পারলে হয়তো আরও ভালো সাড়া পাওয়া যেত।

এমএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর