টিউমার অপারেশন পরবর্তী ক্ষত নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এসেছেন আব্দুল বাতেন (৮২)। আউটডোর-২ সার্জারি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় ২০২ নম্বর কক্ষে ডাক্তার ব্যান্ডেজ খুলে দেখেন এবং কিছু ওষুধ ও পরীক্ষা করতে বলেন। একইসঙ্গে একই ফ্লোরের একটি রুমে গিয়ে ক্ষতস্থানটি ওয়াশ করে নিতে বলেন। ওই রুমে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর নার্স জানালেন, সার্জিক্যাল আইটেম না থাকায় সেবা বন্ধ। হাসপাতালের বাইরে কোনো ক্লিনিকে ওয়াশ করাতে হবে। জরুরি হলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি কিনে দিতে হবে।
রোগী আব্দুল বাতেনের ছেলে মাসুদ আলম বাধ্য হয়ে শাহবাগের ওষুধের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় সার্জিকাল আইটেম কিনে আনেন। এ সময় তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
বিজ্ঞাপন
মাসুদ আলম জানান, কর্তব্যরত নার্স গজ, পোভিসেপ, হেক্সিসল, স্পিরিট, ইউজল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, নরমাল স্যালাইন (০.৯%), গ্লাভস ইত্যাদি কিনতে দিয়েছে। এগুলো নিয়ে গেলেই ব্যান্ডেজ করা হবে বলেই হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকনে তিনি।
হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, কর্তব্যরত ২ নার্সসহ মোট তিনজন রয়েছেন। একজন ফোনে সিনেমা দেখছেন। যার শব্দ দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে। অন্যজন ফোনে কথা বলছেন। আরেকজন টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন। মাসুদ ফোনে কথা বলা নার্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ইশারায় রোগী নিয়ে শোয়াতে বললেন। এরপর নার্স ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেন।

রোগীর স্বজন পরিচয়ে প্রতিবেদক সার্জিকাল আইটেম সম্পর্কে জানতে চাইলে এক নার্স বলেন, অনেকেই এখানে এসে আমাদের ভুল বোঝেন। হাসপাতাল থেকে যদি সার্জিকাল আইটেম দেওয়া না হয় আমরা কি করব? গত তিন মাস ধরে দেওয়া বন্ধ। প্রতি সপ্তাহে চাইলে বলে, মিটিং পরবর্তী সিদ্ধান্তের পর দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
নার্সের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেননি। তবে জানান, আমাদের এখন তেমন কাজ নেই। ডাক্তার রোগী পাঠায়। কেউ যদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দিতে পারে আমরা করে দেই। নয়তো আমাদের কিছুই করার নেই। রোগী তার নিজের মতো করে অন্যত্র করে নেয়।
এদিকে অভিযোগের সুরে রোগী আব্দুল বাতেনের ছেলে মাসুদ আলম বলেন, এখানে একবার ব্যান্ডেজ করাতে আমার ৪১০ টাকার সার্জিকাল আইটেম কিনতে হয়েছে। বাইরে যেকোনো ক্লিনিক বা ওষুধের দোকান থেকে করাতে ২শ টাকার বেশি লাগে না। এর বাইরে ভোগান্তি তো হলোই।
রুম থেকে বের হতেই দেখা যায় অন্তত ২ জন এসেছেন ড্রেসিং ও ব্যান্ডেজ করতে। তাদেরও একইভাবে প্রয়োজনীয় আইটেম লিখে দিচ্ছেন নার্স। এরমধ্যে একজনের নাম রাকিব। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, সামান্য গজ আর পোভিসেপ যদি না থাকে, তাহলে আছেইবা কি? আমি অসুস্থ, একাই এসেছি। একটা লিস্ট দিয়ে বলছে নিয়ে আসেন। দোকান পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি কিংবা অবস্থা কোনোটাই নেই। কি করব বুঝতে পারছি না।

এমন সময় সেবা নিতে আসা নিশিতা নামে এক রোগী বলে উঠেন, এসব অবশ্যই হাসপাতাল থেকে দেয়। এরা (নার্সরা) বাইরে বিক্রি করে দেয়। দুনিয়ার সব যেখানে হয়, এই সামান্য জিনিস বুঝি দেয় না?
সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমানের সাথে দীর্ঘ অপেক্ষার পর তার কার্যালয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। সমস্যার কথা শুনে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমার মন্তব্য করার অনুমতি নেই।
হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না থাকলে কে বলবেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাকে এখানে এসব বলার জন্য বসানো হয়নি। যা বলার বলবে মিডিয়া সেল।
ডিএইচডি

