রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ তাহসিন হোসেইন (১৭) নামের এক কিশোরের অপমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালটিতে ওই কিশোর তিন দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় তাকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে তাহসিনের স্বজনেরা।
পেটের ব্যথার অপারেশন করার পর গত তিন মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অপারেশন করা হলেও সুস্থ হওয়ার বদলে দিন দিন স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে অবশেষে মৃত্যু হয় তাহসিনের।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৩ জুন) ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা তাহসিন হোসাইনের মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তাহসিনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বজনদের অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ মার্চ অপারেশন করে তার মলাশয়ের একটু নালী কেটে ফেলে দেওয়া হয়। অপারেশনকারী ডা. সাইফুল্লাহ একে সফল অপারেশন বললেও ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহসিনের। প্রথম অপরেশনের সাতদিন পর কাউকে না জানিয়েই গত ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন ডা. সাইফুল্লাহ। কিন্তু কোনো সুখবর দিতে পারেননি তিনি। বরং রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। রোগীর ৩ স্থান থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অপারশনের স্থান থেকে, শরীরে লাগানো টিউবের পাশ দিয়ে এবং স্টুল ব্যাগ দিয়ে। যেখানে মল জমা হওয়ার কথা সেখান থেকেও শুধুই রক্ত বের হচ্ছিল।
নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. মনির হোসেন বলেন, আমার ছেলে মার্চ মাসে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। পরে ঢাকা মেডিকেলে গেলে চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দেয়। পরে মার্চের ২৭ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২৮ তারিখ সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাইফুল্লাহ প্রথম অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশনের পরেও আমার ছেলের রক্ত বের হচ্ছিল। কিন্তু সেটা বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ৬ এপ্রিল সকালে একই চিকিৎসক আবারও অপারেশন করেন। তবুও রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি। এমনকি অপারেশন করে পেট থেকে নাড়ির একটা অংশ কেটে ফেলে দেয়। এভাবেই গত তিন মাস ধরে চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ করে মনির হোসেন আরও বলেন, গত তিন মাসে আমার ছেলে শরীরে ১৪৪ ব্যাগের বেশি রক্ত দেওয়া হয়েছে, ৯০ ব্যাগের বেশি প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তার শারীরিক কোনো উন্নতি হয়নি । বরং ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে। অথচ কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মৃতের মা তাজমিন ভূইয়া বলেন, আমার ছেলের পেট ব্যথা ছিল। সে হাটা চলা সব কিছুই করতো। এই অবস্থায় আমরা ল্যাব এইডের ডা. সাইফুল্লাহকে দেখাই। তিনি জানান তার অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যথা এবং মলত্যাগে সমস্যা হচ্ছে। অপারেশনের করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের পেটের সেলাই করা স্থান ফাঁকা হয়ে ময়লা বের হতো। ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হতো। তারাও খেতে দেয়নি। আমার ছেলেও খেতে পারেনি এই তিন মাস। সে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন রান্নার ছবি দেখতো। আর চিন্তা করত, সুস্থ হয়ে সে ইচ্ছামত খাবে। কিন্তু ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। এটা অপমৃত্যু। আমার ছেলে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার। কিন্তু আজ সব স্বপ্ন নিভে গেল।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে তাহসিনের বাবা বলেন, আমি ডা. সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করছি আমার ছেলের সমস্যা কী? কিন্তু উনি কোনবারই সঠিক করে কিছুই বলতে পারেনি। সে যে আমার ছেলের ভুল চিকিৎসা করছে সেটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। কারণ আমি পিজির সাবেক এক চিকিৎসকসহ কয়েকজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি। এমনকি ভারত ও ব্যাংককের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছি। ডা. সাইফুল্লাহকে অনুরোধ করছিলাম ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু উনি বলেননি। একদিন সময় দিয়েও উনি আসেন নাই।
তিনি আরও বলেন, আজকে সকালেও ডা. সাইফুল্লাহ আসছিলেন। কিন্তু যখন শুনছে আমার ছেলে মারা গেছে তখনই তিনি পালিয়ে গেছেন।
পুলিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ করে স্বজনরা বলেন, তাহাসিন মারা যাওয়ার পর আমরা সবাই যখন শোকাহত, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো পুলিশ ডেকে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে৷ এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ল্যাব এইড হাসপাতালের মিডিয়া কর্মকর্তা মেহের-এ-খোদা দীপ বলেন, `আপনার ভালো একটা ইস্যু পেয়েছেন। এ বিষয় আমি কিছু জানি না। জেনে জানাতে হবে।'
এমএইচ/এমআর

