বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

চলচ্চিত্রে নজরুল

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩, ০৯:২২ এএম

শেয়ার করুন:

চলচ্চিত্রে নজরুল
বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অধিক পরিচিতি বিদ্রোহী সত্তার কবি হিসেবে। তবে অন্যান্য অঙ্গনেও স্বমহিমায় আলো ছড়িয়েছেন তিনি। গান, গদ্য, উপন্যাসসহ সাহিত্যের সকল শাখায় কবির ছিল অবাধ বিচরণ। এর বাইরে নিজেকে তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন চলচ্চিত্রেও। নির্মাণ, অভিনয়, চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায় তিনি ছিলেন অনবদ্য। কবির সাহিত্যকর্ম ও কবিকে নিয়েও তৈরি হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্রে নজরুল

গীতিকার ও সুরকার হিসেবে নজরুলের ছিল দারুণ খ্যাতি। ত্রিশ-চল্লিশের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে।

সেসময় পাতালপুরীগৃহদাহপ্রহরফেরগোরাসহ আরও অনেক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। গীতিকার হিসেবে কবিকে পাওয়া গেছে রজতজয়ন্তীনন্দিনীঅভিনয়দিকশূল প্রভৃতি সিনেমায়। এখানেও তিনি ছিলেন সফল। কেননা, এসব চলচ্চিত্রের গানগুলো দারুণ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিল সেসময়।

নজরুল

ত্রিশের দশকে চলচ্চিত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল সুর ভাণ্ডারীর পদটি। এই কাজে বেশ পাকা ছিলেন নজরুল। তখন তিনি পার্সি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটার্সের হয়ে সুর ভাণ্ডারীর কাজ করতেন। এই প্রতিষ্ঠান নির্মিত জ্যোৎস্নার রাত (১৯৩১), প্রহ্লাদ (১৯৩১), ঋষির প্রেম (১৯৩১), বিষ্ণুমায়া (১৯৩২) ছাড়াও আরও বেশকিছু চলচ্চিত্রে সুর ভাণ্ডারীর গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন কবি।


বিজ্ঞাপন


বাংলা চলচ্চিত্রে প্রশিক্ষকের কাজও করতেন তিনি। তখনকার দিনে চলচ্চিত্রে যারা গাইতেন, তাদের গান শেখাতেন নজরুল। এ ছাড়া অভিনয় শিল্পীদের নির্ভুল উচ্চারণ শেখানোর ভারও ছিল তার ওপর।

তবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে এসে নজরুল শুধু সংগীতের গণ্ডিতেই বাঁধা ছিলেন না। বাংলা চলচ্চিত্রে তার সম্পৃক্ততা খুঁজতে গেলে একজন অভিনেতা, নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেও পাওয়া যায় তাকে। ধূপছায়া নামের একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণ করেছিলেন কবি। ১৯৩৭ সালে তার গল্প অবলম্বনে নির্মাতা দেবকী বসু নির্মাণ করেন বিদ্যাপতি নামক একটি চলচ্চিত্র। একই নির্মাতার নির্মাণে ১৯৩৯ সালে সাপুড়ে চলচ্চিত্রে কবিকে পাওয়া যায় কাহিনিকার হিসেবে। সিনেমাটির কাহিনি লিখতে গিয়ে বেশ কিছুদিন বেদে পল্লীতেও বাস করেছেন কবি।

রাক্ষুসী

নজরুলকে নিয়ে চলচ্চিত্র

সেলুলয়েড ফিতায় নজরুলকে বন্দী  করা হয় তার জীবদ্দশায়। ১৯৫৬-৫৭ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয় বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম নামের চলচ্চিত্র। এর অর্থায়নে ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পরে কবির জীবনের ওপর আরও একাধিক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছিল বিদ্রোহী কবি নামের একটি সিনেমা। পরে ১৯৭২ সালে কবিকে নিয়েকাজী নজরুল ইসলাম  শিরোনামে একটি সিনেমা বানায় ভারত সরকার। একই নামে বিবিসি থেকে নির্মাণ করা হয়েছিল আরও একটি সিনেমা। বিদেশি নির্মাতার নির্মাণেও বাঁধা পড়েছেন এই কবি। কানাডার চলচ্চিত্র পরিচালক ফিলিপ স্পারেল তাকে নিয়ে নজরুল নামের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

নজরুলের মেহের নেগার গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে একটি সিনেমা নির্মিত হয়। সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন মুশফিকুর রহমান ও মৌসুমী। চলচ্চিত্রে প্রধান দুই চরিত্র— কাশ্মীরের তরুণী মেহের নেগারের চরিত্রে মৌসুমী এবং আফগান যুবক ইউসুফের ভূমিকায় ফেরদৌস অভিনয় করেন। এ সময়ে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় নজরুলের গল্প রাক্ষসী অবলম্বনে। সিনেমার পরিচালক মতিন রহমান। তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা, পূর্ণিমা ও ফেরদৌস। এর আগে নজরুলের গল্প ‘জ্বিনের বাদশাহ’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন বাপ্পারাজ। নজরুলের উপন্যাস মৃত্যুক্ষুধা এবং গল্প ব্যথার দানপদ্মগোখরা অবলম্বনেও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

Meher

শিশুদের জন্য লিখতে কার্পণ্য করেননি কবি নজরুল। তার লেখা দুটি জনপ্রিয় শিশুতোষ কবিতা লিচু চোরখুকি ও কাঠবিড়ালী নিয়ে শিশু একাডেমি নির্মাণ করেছে দুটি সিনেমা।

চলচ্চিত্র ব্যবসায় নজরুল

চলচ্চিত্র ব্যবসায়ও নাম লিখিয়েছিলেন নজরুল। ১৯৪১ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের পৃষ্ঠপোষকতায় নজরুল ‘বেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, হুমায়ূন কবীর, এস ওয়াজেদ আলী, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আজিজুল ইসলাম, সারওয়ার হোসেন, আজিজুল হক প্রমুখ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর