ফের উত্তপ্ত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। বাতিল করা হচ্ছে জায়েদ খানের সদস্যপদ। পাশাপাশি সুচরিতা ও মাসুম পারভেজ রুবেলেরও নাম কাটা যেতে পারে সমিতির সদস্য তালিকা থেকে। সূত্রের খবর মানলে, আগামীকাল রোববার বিকালে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বর্তমানে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা নিপুন আক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে মানহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগে জায়েদের সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে!
বিজ্ঞাপন
ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ যখন জায়েদ ভারতে অবস্থান করছিলেন তখন তার কাছে এসব বক্তব্যের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, নিপুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে মানহানিকর মন্তব্য করায় সমিতির গঠনতন্ত্রের ৭(ক) ধারা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ তার সদস্যপদ বাতিলের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
তবে উল্লেখিত গঠনতন্ত্রের আলোকে জায়েদের সদস্যপদ বাতিলের কতটুকু এখতিয়ার আছে—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন! গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সংগঠনের উদ্দেশ্যাবলীর পরিপন্থী, সংগঠনের স্বার্থের বিরুদ্ধে বা সংগঠনের অবমাননাকর কোনো কার্য করিলে সদস্যপদ বাতিল হবে।
জায়েদ খানের মতে, নিপুনের বিরুদ্ধে বলা মানেই সংগঠন অবমাননা নয়। তার কথায়, ‘সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আদালতে এখনও মামলা চলমান। কোনো চূড়ান্ত রায় আসেনি। কিন্তু তিনি অন্যায়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিপুন আমার কাছে নির্বাচনে হেরেও গায়ের জোরে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তো আমি কথা বলতেই পারি। আমি তো সংগঠনের দিকে আঙুল তুলিনি।’
বিজ্ঞাপন
কারণ দর্শানো নোটিশ প্রসঙ্গে জায়েদ বলেন, ‘আমি দেশে না থাকার সুযোগে তারা আমাকে নোটিশ পাঠিয়েছে। কারণ তারা জানে, আমি উত্তর দিতে পারব না। তারা আমার সাথে একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে। আমি সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছি।’
এদিকে সমিতির সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল এবং কার্যকরী সদস্য সুচরিতাকেও দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা সমিতির সভায় অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। তারা দুজনেই একইরকম লেখনির মাধ্যমে নোটিশের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
রুবেল ও সুচরিতা পৃথক দুটি কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যাপত্রে লিখেছেন, ‘সমিতির গঠনতন্ত্রের ৯(ঘ) ধারা অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক পদটি কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রধান নির্বাহী পদ এবং এই ধরনের দাফতরিক চিঠিপত্র তারই স্বাক্ষরে প্রেরণ হবার কথা। কোনো যৌক্তিক/বৈধ কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলে তার স্থলে গঠনতন্ত্রের ৯(ঘ) ধারা মোতাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক তা সম্পাদক করবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে আমার কাছে পত্রটি প্রেরণ করা হয়নি।’
সেখানে তারা আরও লিখেছেন, ‘তার চেয়ে বড় সত্য এই যে, প্রধান নির্বাহীর উক্ত পদের বৈধতা নিয়ে মাহমান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি মামলা এখনও বিচারাধীন বা অমীমাংসিত। এমতাবস্থায় সমিতির প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ও কার্মকান্ড পাশ কাটিয়ে যেকোনো সভা-সমাবেশ বা নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা কার্যক্রম অগঠনতান্ত্রিক এবং একই সাথে সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার শামিল।’
অর্থ্যাৎ রুবেল ও সুচরিতার এমন ব্যাখ্যায় প্রতীয়মান হয় যে, তারা কোনোভাবেই নিপুনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মতে, তিনি আদলত অবমাননা করছেন।
২০২১ সালের ২১ নভেম্বর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলা হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিপুনের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করে তাকে আপিলের অনুমতি দেন আদালত। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘আপতত’ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই নিপুনের।
তবে জায়েদ জানান, বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। নিপুন আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করায় তা গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ।
আরএসও/আরআর