শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

কনটেন্টের কারণেই ভারতের দর্শক সিনেমাটি দেখবেন: ‘হাওয়া’র পরিবেশক

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কনটেন্টের কারণেই ভারতের দর্শক সিনেমাটি দেখবেন: ‘হাওয়া’র পরিবেশক
শ্রেয়সী সেনগুপ্ত । ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রেক্ষাগৃহে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি পাওয়া যেন আকাশ-কুসুম কল্পনা। তবে এবার সেই কল্পনাই সত্যি হতে চলেছে। দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ‘হাওয়া’ মুক্তি পাচ্ছে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম এই রাষ্ট্রে। ১৬ তারিখ মুক্তি পাবে পশ্চিমবঙ্গে। অন্যান্য রাজ্যে মুক্তি পাবে ৩০ তারিখ। রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে ভারতে সিনেমাটি মুক্তি দিচ্ছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কনটিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেইল কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী শ্রেয়সী সেনগুপ্তর সঙ্গে।

‘হাওয়া’র সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?

বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার অনেক পুরোনো সম্পর্ক। অনেকদিন ফলো করছি। সিঙ্গাপুরে কয়েক বছর ধরে দর্পণ আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব করি। ২০১০-১১ সাল থেকে বাংলাদেশি সিনেমা সেই উৎসবে অংশ নিচ্ছে। জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরাও উৎসবে যোগ দেন। তা ছাড়া আমার রুটস বরিশাল আর ঢাকায়। রুটসের টান তো থাকেই। বাংলাদেশে যা যা ছবি হচ্ছে সেগুলো দেখি। জুলাই মাসে যখন ‘হাওয়া’ রিলিজ হলো তখন শুনতে পেলাম এটি কোভিডে শুট হয়েছে। বড় পরিসরে নির্মিত হয়েছে। এরপর সিনেমাটির প্রতি আমার কৌতূহল জন্মে। সেই কৌতূহল থেকে সিনেমাটি দেখে ফেলি। তারপর যখন জানতে পারলাম এই ছবি সফলতার দিকে এগোচ্ছে তখন আগস্ট মাসে ‘হাওয়া’ টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কারণ আমি অনুধাবন করি, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়া দরকার। সিঙ্গাপুরে বড় বাংলাদেশি মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি আছে। আর অবশ্যই ভারত। আমাদের পার্টনার অর্গানাইজেশন হলো রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট। খুব বড় আয়োজনে কোনো বাংলাদেশি সিনেমা ভারতে রিলিজ হয়নি।

ভারতসহ অন্যান্য দেশে ‘হাওয়া’ পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে কনটিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড। বিশেষ করে ভারতবর্ষে বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দেওয়া কঠিন বটে। এই কঠিন কাজটা সহজ করা কীভাবে সম্ভব হলো?

সবসময় আমার কঠিন কাজ করতে ভালো লাগে। আমি যখন প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু করি তখন সেটিও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ইন্ডিয়ানস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হতো কিন্তু বেঙ্গলি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কখনও হয়নি। সেটাও আমি করেছিলাম। চ্যালেঞ্জ হলেই তো মজা। যেটা কঠিন সেটা করে ফেলার মধ্যে আনন্দ আছে। এই সিনেমা মুক্তির বিষয়ে বলব, বাংলাদেশি প্রযোজকসহ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি বলে হয়তো কঠিন কাজটা সহজ হয়েছে। আমাদের সঙ্গে মুম্বাইয়ের টিম কাজ করছে। কলকাতার টিমও কাজ করছে। মুম্বাইয়ের টিম বাংলা বোঝে না। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘হাওয়া’র মতো সিনেমা মুক্তি দিচ্ছে। এটাও একটা কঠিন পথ। প্রথমবার কিছু করতে গেলে তো কাজটা কঠিন হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আশা করি সেকেন্ড টাইম থেকে প্রক্রিয়াটা সহজ হয়ে যাবে। ফলে ইন্ডিয়াতে বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দেওয়া আরও সহজ হয়ে যাবে।

Shreyoshi


বিজ্ঞাপন


পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে ‘হাওয়া’ পরিচিত। কিন্তু ভারতের অন্যান্য ভাষার দর্শকের কাছে সিনেমাটি অচেনা। এটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তির সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীক ঝুঁকি বলে মনে করছেন না?

নো রিস্ক নো গেইন। সিনেমার ডিস্ট্রিবিউশনে তো আমরা রিস্ক নিয়ে থাকি। এটার মধ্যে ঝুঁকি তো আছেই। দর্শক কিন্তু এখন আর ভাষা দেখেন না। তারা কনটেন্ট দেখেন। যদি কনটেন্ট ভালো হয় তাহলে দর্শক আসবেন। তাই মনে করি, কেবলমাত্র কনটেন্টের কারণে ভারতের দর্শক ‘হাওয়া’ দেখবেন।

যেমন, ‘হাওয়া’ শুধু সিঙ্গাপুরের বাঙালি দর্শকরা দেখেননি। চায়নিজ ও মালয়েশিয়ান দর্শকও দেখেছেন। সেখানে ভাষাগত দূরত্ব আস্তে আস্তে কমে আসছে। ভারতে আমরা যেসব শহরে মুক্তি দিচ্ছি, সেসব জায়গার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। রিলায়েন্স টিম এটা খুব ভালোভাবে করছে। খুব দক্ষ টিমের সদস্যরা। তারপরও দর্শককে তো হলে আসতে হবে। এটা তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে তারা সিনেমাটি দেখতে আসবেন। তবুও আমরা রিস্ক নিচ্ছি দুই দেশের চলচ্চিত্রের দরজাটা উন্মুক্ত করতে।  

আপনি যখন রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের কাছে ভারতে ‘হাওয়া’ মুক্তির প্রস্তাবটি রাখলেন। তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

রিলায়েন্সেকে আমার অনেক বোঝাতে হয়েছিল। তবে তারা অনেক বাংলা ছবি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছে। বাংলাদেশি ছবিও পরিবেশনা করেছে কিন্তু অনেক ছোট স্কেলে। রিলায়েন্স সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আন্তরিক। ‘হাওয়া’ মুক্তির বিষয়ে কিছু গাইডলাইন আছে। কোথায় কোথায় মার্কেটিং করতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রিলায়েন্সের কলকাতা অফিসও অনেক স্ট্রং। তারাও হেল্প করেছে। এ ধরনের একটি টিমের সঙ্গে কাজ করাও ভালো। আশা করি টিমের প্রচেষ্টা সফল হবে।

Hawa
পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে ‘হাওয়া’র পোস্টার ছবি: পরিবেশক

এই যে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, এর উদ্দেশ্য কী?

বাংলাদেশের কনটেন্টের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আর সেটাকে আমাদের প্রোমোট করা উচিত। আমি সবসময় ভালো কনটেন্টের সঙ্গে আছি। আমার চাওয়া, সারাবিশ্বে বাংলা ছবি ছড়িয়ে পড়ুক। সামনেও সুযোগ পেলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি ছবি মুক্তি দিতে চাই।

এক দেশের ছবি অন্য দেশে মুক্তি দিতে কিছু জটিলতা পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সরকার কতোটা আন্তরিক ছিল?

সিনেমাটি ভারতে রিলিজ দিতে খানিকটা সময় লেগে গেছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আমরা কোনো সমস্যার মুখে পড়িনি। বাংলাদেশ-ভারত সরকার এ ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল। তবে আমি মনে করি, ছবি মুক্তি ও প্রদর্শনের বিষয়ে দু’দেশের সরকার আরও বেশি সহযোগীতা পরায়ণ হলে বাংলা চলচ্চিত্রের বিশ্বায়ন সম্ভব।  

Hawa
পশ্চিমবঙ্গে চলছে ‘হাওয়া’র প্রচারণা ছবি: পরিবেশক

সিঙ্গাপুরেও ‘হাওয়া’ মুক্তি দিয়েছেন। সেখানে কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল?

আমি এর আগেও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে গেছি। সেসব সিনেমা একটি-দুটি স্ক্রিনিং হয়েছে। হল ভাড়া করে এক-দুটি শো দেখাতে হয়েছে। সিঙ্গাপুরের সবথেকে বড় চেইন গোল্ডেন ভিলেজ প্রোগ্রাম করে চার সপ্তাহ প্রদর্শন করেছে। প্রথমবার এমন হলো। এটা কিন্তু বড় একটি বড় অর্জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর
‘হাওয়া’ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ
‘হাওয়া’ নিয়ে কাজী হায়াতের ক্ষোভ

বলিউডেও যেন বাংলাদেশি শিল্পীরা নিয়মিত সুযোগ পান, সেক্ষেত্রে আপনি কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠান কাজ করবে কি না!

আমার দুটি প্রতিষ্ঠান আছে। একটি কনটিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড, যেটি ডিস্ট্রিবিউশনের দিকটা দেখে। অন্যটি দর্পণ গ্লোাবল। এটি প্রোডাকশন কোম্পানি। সিনেমা প্রযোজনা করে। এই প্রোডাকশনের একটি সিনেমায় বাংলাদেশি অভিনেতা সিয়াম আহমেদকে নিয়ে কাজ করছি। আমি ক্রসবর্ডার কাস্টিংয়ে বিশ্বাস করি। কোনো নির্দিষ্ট ভাষা বেঞ্চমার্ক হতে পারে না। কনটেন্ট ইজ দ্য বেঞ্চমার্ক। বলিউড-টলিউডও তা নয়। সিয়াম বলিউড কনটেন্টে অভিনয় করছেন না। তিনি ক্রসবর্ডার ইন্টারন্যাশনাল কনটেন্টে কাজ করছেন। সিনেমাটি সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, ইউরোপ ও ইন্ডিয়ার যৌথ প্রযোজনা। তাই কনটেন্টকে বলিউড-টলিউড বেঞ্চমার্ক দেওয়া বন্ধ করতে হবে। যখনই আমরা বর্ডারলেস কনটেন্ট দেখব তখন আরও বর্ডার খুলে যাবে। আমাদের মধ্যে এটা কাজ করে যে, আজকে ঢালিউডে, কাল টলিউডে কাল বলিউডে কাজ করতে হবে। এই স্টেপসগুলো উঠিয়ে দিতে হবে।

Hawa Inner
‘হাওয়া’র পোস্টার ছবি: সংগৃহীত

এখানকার এমন কোন কোন শিল্পীর মধ্যে আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠার সামর্থ্য রাখেন?

আমি তারকা ব্যাপারটায় খুব একটা বিশ্বাস করি না। অভিনেতা খারাপ হয়, ভালো হয়। বাংলাদেশে ভালো অভিনেতার সংখ্যা প্রচুর। অনেক বাংলাদেশি কনটেন্ট দেখি। প্রতিবার দেখি আর তাদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। ‘হাওয়া’তে চঞ্চল চৌধুরী যেমন অভিনয় করেছেন ‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজে ভিন্ন রূপে হাজির হয়েছেন। এটা তার অভিনয় দক্ষতার বৈচিত্র্যতা। সম্প্রতি ‘কুড়া পক্ষী’ সিনেমাটা দেখলাম। সেখানে প্রত্যেকে দারুণ অভিনয় করেছেন। হিমুর অভিনয় অসাধারণ লেগেছে। ইন্তেখাব দিনার ভার্সেটাইল একজন অভিনেতা। আর মোশাররফ করিমের অভিনয় দেখে স্ক্রিন থেকে চোখ সরানো যায় না। আজমেরি হক বাঁধন নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিতে তিনি কঠিন একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আমি আরও অনেক নাম বলতে পারি, যারা সবাই সাংঘাতিক মেধাবি।

/আরএসও  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর