সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কেন সিনেমা ছেড়েছিলেন শাবানা

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কেন সিনেমা ছেড়েছিলেন শাবানা

সিনেমার কাজ নিয়ে যখন দম ফেলার ফুসরত ছিল না শাবানার, ঠিক তখন কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন তিনি। দেশের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়েছেন দুই দশক হলো। তবুও তার জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। বরং এখনও দর্শক শাবানার ফিরে আসার অপেক্ষায়।

হঠাৎ করে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শাবানা নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পেছনে প্রচলিত একটি কারণ চাউর হয়ে আছে। জানা যায়, তার আমেরিকা প্রবাসী মেয়েকে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন তিনি মানত করেন, মেয়েকে যদি ফিরে পান তাহলে জীবনে আর কখনও অভিনয় করবেন না! এই জগৎ ছেড়ে দিয়ে ধর্ম চর্চায় মন দিবেন। মেয়েকে ফিরে পেয়ে তিনি অভিনয়, চলচ্চিত্র ও দেশ ছাড়েন। স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন আমেরিকায়।


বিজ্ঞাপন


তবে এই তথ্যটি প্রতিষ্ঠিত নয়। শাবানা নিজেও কখনও এমন কথা বলেননি। দুই বছর আগে যখন তিনি দেশে এসেছিলেন তখন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন।

Sabana

শাবানার ভাষ্য, ‘লাখো-কোটি মানুষের ভালোবাসায় শাবানা হলাম। হঠাৎ মনে হলো, সন্তানদেরও তো সময় দেওয়া দরকার। আমার বড় মেয়ে সুমী তখন এ লেভেল শেষ করল। উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলো। কিছুদিন পর ছোট মেয়ে ঊর্মি আর ছেলে নাহিনও যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেল। ওদের সবার বয়সইবা তখন আর কতো! বাচ্চারা আমাকে খুব মিস করছিল। দেশে যখন ছিল, তখন তো আমার চোখের সামনেই ছিল। কাজের ফাঁকে দেখতাম। তখন আমিও ভাবলাম, মা হিসেবে আমার তো কিছু দায়িত্ব আর কর্তব্য আছে। সন্তানদের যদি ঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আমার এই অভিনয়জীবন দিয়ে কী হবে! তাই কষ্ট হলেও সিনেমা ছেড়ে সন্তানদের ব্যাপারে মনোযোগী হলাম। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাদিক (স্বামী) সাহেবও ওখানে কিছু ব্যবসার ব্যবস্থা করলেন। আমিও দেখলাম অনেক দিন তো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলাম, এবার ঘরের দিকে মনোযোগী হই। তাই চলে গেলাম। তবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও কিন্তু আমার কাছে একটা পরিবারের মতো ছিল। সেখানে আমি রাত-দিন অবসরবিহীন কাজ করেছি। সহশিল্পী, পরিচালকদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক গড়ে উঠল। কাউকে ভাই, আবার কাউকে চাচা ডাকতাম। সবাইকে খুব মিস করি। কিন্তু মানুষের জীবনে একটা সময় আসে, যখন কোনো উপায় থাকে না। জীবনের ধাপে ধাপে কিছু সময় আসে, সে সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব দরকার। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, আমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’


বিজ্ঞাপন


শাবানা জানিয়েছেন, তার সন্তানরা পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফেলেছেন। বড় মেয়ে সুমী ইকবাল এমবিএ করেছেন। বিয়ে করে এখন সে পুরোদস্তুর গৃহিণী। ছোট মেয়ে ঊর্মি সাদিক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ছেলে নাহিন সাদিক রটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে চাকরি করছেন।

Sabana

দেশান্তরি হলেও দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন শাবানা। চলচ্চিত্রের দুরাবস্থা নিয়েও তিনি চিন্তিত। ওই ঘরোয়া আলাপে শাবানা বলেন, ‘আমি অভিনয় ছাড়ার পর ঢাকার ফিল্মের এমন দুরাবস্থা হবে কল্পনাও করতে পারিনি। একজন অভিনয় থেকে অবসর নিতেই পারে, তাই বলে আরেকজন সিনেমা করবে না, তা তো হয় না।’

তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে অভিনয় করেছেন শাবানা। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। সমাজ ও পারিবারিক জীবনের বহু সমস্যা তিনি তুলে ধরেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে। দর্শককে হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন। তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। অসামান্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে রেকর্ড ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী।

/আরএসও

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর