সংগীতের মাধ্যমে দেশকালের সীমান্তরেখা অতিক্রম করেছেন রুনা লায়লা। তার সুরের মূর্ছনায় মাতোয়ারা গোটা উপমহাদেশ। নানা ভাষার গানে ছিল তার সমান বিচরণ।
বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, ইতালীয় ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন রুনা লায়লা।
বিজ্ঞাপন
রুনা লায়লার অধিকাংশ গান জনচিত্তকে জাগ্রত করে জায়গা করে নিয়েছে কালজয়ীর তালিকায়। সেসব যেন মধ্যবিত্তের জীবনসমুদ্রে অবিরাম সন্তরণের মাঝে ক্ষণিকের শ্বাস নেওয়ার ক্ষুদ্র অথচ সম্ভাবনাময় একটুকরো বিরতি। তাই এই কিংবদন্তিকে নিয়ে বাঙালির এত আত্মশ্লাঘা।
রুনা লায়লার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। রুনা লায়লার যখন আড়াই বছর বয়স তখন তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে চলে যান। সেই সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।

১৯৬৬ সালে রুনা লায়লা উর্দু ভাষার ‘হাম দোনো’ চলচ্চিত্রে ‘উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা’ গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ওই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা কলকাতায় সিলেটি গান ‘সাধের লাউ’র রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মতো কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় দিল্লিতে তার পরিচালক জয়দেবের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন।

‘এক সে বাড়কার এক’ চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে সংগীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সঙ্গে প্রথম কাজ করেন রুনা লায়লা। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। রুনা ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ ও ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ গান দুটি দিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
বংলাদেশ তো বটেই, ভারত-পাকিস্তানেও সমান জনপ্রিয় রুনা লায়লা। এখনও তার গান বাজে দেশ দুটির ঘরে ঘরে। ভারতের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝে মাঝে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন তিনি। এমনকি বলিউডের অনেক তারকা তার গাওয়া সেই পুরোনো গান শুনে এখনও মুগ্ধ হন। সামাজিক মাধ্যমে জানান সেই ভালো লাগার কথা।

পাকিস্তানের মানুষও ভোলেননি রুনা লায়লাকে। সেখানে এখনও তুমুল জনপ্রিয় তিনি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এখনও প্রচারিত হয় তার গান। দেশটির নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত তিনি।
বাংলাদেশ হোক কিংবা ভারত-পাকিস্তান, রুনা লায়লা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘আইকনিক ইমেজ’ হয়ে থাকবেন। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী থেকে তিনি বিদায় নিলেও তার কণ্ঠমাধুর্য থাকবে অমলিন।
/আরএসও

