মৃত্যু ভয় ছিল লতা মঙ্গেশকরের। প্রিয় কারও মৃত্যু সংবাদ শুনলে তিনি মুষড়ে পড়তেন। আর সেকারণে চিকিৎসক তাকে মৃতদেহের সামনে যেতে নিষেধ করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই জানিয়েছিলেন। অথচ মৃত্যুকে ভয় পাওয়া লতা আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেলেন। লতা ছিলেন ভূ-খণ্ড ছাড়ানো কণ্ঠশিল্পী। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পরিণত হয়েছেন প্রজন্মের অনুপ্রেরণায়।
লতার মহাপ্রয়াণের দিনে জেনে নেওয়া যাক তার নানা অজানা কথা—
বিজ্ঞাপন
১) লতা মঙ্গেশকরের আসল নাম হেমা। ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারাঠি পরিবারে তার জন্ম। লতার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন নাট্য অভিনেতা ও গায়ক। তিনি ‘ভাববন্ধন’ নামে একটি নাটকে অভিনয়ের সময় ‘লতিকা’ চরিত্রে প্রভাবিত হয়ে মেয়ের নাম বদল করে ‘লতা’ রাখেন।
২) লতাকে ভেবে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন রাজ কাপুর। তাকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লতা অভিনয় করতে রাজি হননি। পরে ওই ছবিতে তার পরিবর্ত জিনাত আমান অভিনয় করেন। যতীন্ত্র মিশ্রর বই ‘লতা সুর গাথা’য় এই তথ্য নিজেই জানিয়েছেন লতা।
৩) লতার প্রথম উপার্জন ছিল মাত্র ২৫ টাকা। মঞ্চে গেয়ে তিনি এই টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। লতা ১৯৪৪ সালে মারাঠি ছবি ‘কিটি হাসাল’ এর জন্য প্রথম গান গেয়েছিলেন। তার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর এবং বোন ঊষা মঙ্গেশকর, মিনা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলে সকলেই সঙ্গীতজ্ঞ।
বিজ্ঞাপন
৪) বলিউডে লতাকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখতেন দিলীপ কুমার। আবার লতাও দিলীপ কুমারকে সব থেকে কাছের মানুষ মনে করতেন ইন্ডাস্ট্রিতে। একবার দিলীপ কুমার লতার ওপর খুব রেগে গিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে লতা নিজের প্রথম প্রোগ্রাম করছিলেন, যেখানে অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য দিলীপ কুমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
দিলীপ কুমার নিজের কাজ ভীষণ মন দিয়ে করতেন এবং ছোট ছোট বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিতেন। ‘পাকিজা’ ছবির গান ‘ইনহি লোগো নে লে লি দুপাট্টা মেরা’ এই গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে নিমরাজি ছিলেন তিনি। লতাকে দিলীপ কুমার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘অনুষ্ঠানের শুরুতেই এই গানটি কেন করতে চাইছেন আপনি?’ লতা তখন দিলীপ কুমারকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন যে, এই গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান এবং মানুষ এটি শুনতে চাইছেন। কিন্তু তখন দিলীপ কুমারকে কোনোভাবেই বোঝানো যায়নি। তিনি ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন।
৫) রেকর্ডিং করতে করতে প্রায়ই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়তেন লতা। ভীষণ ক্ষুধা পেত তার। তখন রেকর্ডিং স্টুডিওতে ক্যান্টিন থাকতো। সেখানে চা-বিস্কুট খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিতেন। এমনও দিন গেছে, তিনি শুধু পানি খেয়ে রেকর্ডিং করেছেন। সারাক্ষণ তিনি পরিবারের কথা ভেবে টানা কাজ করে যেতেন।
৬) কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি লতা। এর কারণ একমাত্র ছোট বোন আশা। দিদিকে ছাড়া সে কিছু বুঝতো না। তাই বাধ্য হয়ে বোনকে নিয়ে স্কুলে যেতেন। কিন্তু স্কুল থেকে বলে দেওয়া হলো, বোনকে নিয়ে স্কুলে আসা চলবে না। সঙ্গে সঙ্গেই বড় বোন ঠিক করে ফেললেন আর কোনো দিন যাবেন না স্কুলে। যানওনি।
আরএসও

