সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এমএনইউ রাজুর প্রথম অ্যাওয়ার্ড

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

এমএনইউ রাজুর প্রথম অ্যাওয়ার্ড
চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে জুড়ি নেই অভিনেতা এমএনইউ রাজুর। প্রমাণ দিয়েছিলেন শুরুতেই। ‘গ্রাজুয়েট’ নাটকে ‘আবুল’ চরিত্রে ছড়িয়েছিলেন ভীষণ মুগ্ধতা। দর্শকের মাঝে পরিচিতি পেয়েছিলেন ওই নামে। বর্তমানে তাকে সবাই ‘মোজাম্মেল বেয়াই’ বলে ডাকেন। ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিকে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। একাধারে অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা রাজুর স্বপ্ন সিনেমা বানাবেন। তার সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকা মেইলের। উঠে এসেছে তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুননের কথা।

সহকারী পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তখন কি ভেবেছিলেন অভিনেতা হিসেবে এমন জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন?

না, নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করেছিলাম। মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সহকারী ছিলাম। অভিনেতা হওয়ার কোনো স্বপ্ন বা পরিকল্পনা ছিল না। আমাকে অভিনেতা হিসেবে আবিষ্কার করেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।

সেই গল্পটা জানতে চাচ্ছি…

আমি যখন সহকারী পরিচালক ছিলাম তখন ‘মাইক’ নামে একটি নাটকে কাজ করি। নাটকটি সেসময় ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেখানে হাসান মাসুদ ভাইয়ের একটি চরিত্র ছিল। তিনি নাকি সুরে কথা বলতেন। সহকারী ছিলাম বলে অনেক সময় অভিনেতাকে চরিত্র বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা আমার ছিল। হাসান মাসুদ ভাইয়ের চরিত্র বুঝিয়ে দেওয়ার সময় আমার নাকি সুরে কথা বলাটা রাজ ভাই খেয়াল করেন। অনেক সময় আমারটা অভিনেতার চেয়ে ভালো হতো। এরপর ‘গ্রাজুয়েট’ নাটকের কাজ শুরু হলে তিনি আমাকে বলেন, এখানে তোমার একটা ক্যারেক্টার আছে। তুমি অনুশীলন করতে থাকো। তারপর ‘গ্র্যাজুয়েট’ নাটকে অভিনয় করি। চরিত্রটা জনপ্রিয়তা অর্জন করায় আমার উৎসাহ বেড়ে যায়। এভাবেই পথচলা শুরু।

mnu raju


বিজ্ঞাপন


‘গ্রাজুয়েট’ নাটকের ‘আবুল’ থেকে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিসে’র ‘মোজাম্মেল বেয়াই’— মাঝের জার্নিটা কেমন ছিল?

মাঝে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিতে যোগ দেই। ফলে একটা বড় গ্যাপ পড়ে যায়। এই সময়টায় মাঝে মাঝে নির্মাণ করতাম। শখে গান করতাম, অভিনয় করতাম। তবে সম্পূর্ণ পেশাদারভাবে ছিলাম না। কিন্তু আমার উপস্থিতি ছিল। আমি যে হারিয়ে গেছি এরকম হয়নি কখনও। সবকিছুর মধ্যেই আমার ছোঁয়া ছিল।

আপনাকে দর্শক রাজু নামে যততা চেনে তার চেয়ে বেশি চেনে আপনার অভিনীত বিভিন্ন চরিত্রের নামে। কেমন লাগে এটা?

‘গ্রাজুয়েট’ যখন করি তখন সোশ্যাল মিডিয়ার এতটা প্রসার ঘটেনি। তারপরও মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েছি যে আমার ধারনার বাইরে। একদিন রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেছি কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাড়া নেননি। তিনি বলেন, আপনি আবুল না? আপনার জন্য ১৪০০ টাকা দিয়ে ‘গ্রাজুয়েট’ নাটকের ডিভিডি কিনেছি আর আপনার থেকে ভাড়া নেব? আমার ওই সময়ের অনুভূতিটা বোঝানোর মতো না। ওটা ছিল আমার অভিনয় জীবনের সেরা পুরস্কার। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই সংযুক্ত। ফলে মোজাম্মেল বেয়াই হিসেবে আমার জনপ্রিয়তাটা অন্য রকম। রস্তায় বের হলেই অনেকেই মোজাম্মেল বেয়াই বলে ডাকেন। অনেকেই বলেন, ওই যে বেয়াই যায়। সময় অনুযায়ী দুটোর জনপ্রিয়তাই ঠিক ছিল। তবে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিসে’র মোজাম্মেল বেয়াই আমাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে নিয়ে গেছে।

mnu raju

আপনাকে সাধারণত চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখা যায়। নায়ক হতে ইচ্ছে করে না?

আমি যেহেতু একজন নির্মাতা ওই জায়গা থেকে যদি দেখি তবে নায়ক বলতে কিছু নেই। আমি যদি একটা কুকুরকে নিয়ে গল্প বানাই তাহলে ওই কুকুরটাই হচ্ছে নায়ক। আর আমাদের এখানে যাদের নায়ক বলা হয় এটা আসলে আমাদের বানানো। একটু সুন্দর, হ্যান্ডসাম, স্মার্ট কাউকে ভেবে গল্প এগিয়ে যায়। আমরা তাকে নায়ক বলি। আসলে এটা ভুল। পৃথিবীর কোথাও এরকম নেই। আমরা সবাই আর্টিস্ট। আর আমার কাছে গল্পই নায়ক।

‘তারকাটা’ -এর পর আর সিনেমায় দেখা যায়নি। কেন? 

ওই যে বললাম চাকরিতে যোগ দেওয়ায় একটা গ্যাপ পড়ে যায়। তবে সম্প্রতি  রায়হান রাফি নির্মিত ‘নূর’ সিনেমায় কাজ করেছি। খুবই সুন্দর গল্পের একটি সিনেমা। আশা করি দর্শকের ভালো লাগবে। 

mnu raju

ভবিষ্যতে নিজেকে কী হিসেবে দেখতে চান— অভিনেতা নাকি নির্মাতা?

ইচ্ছা আছে নিজেকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার। তবে আমার কাছে নির্মাণের আনন্দটা অন্যরকম। যেমন, ‘সিকিউরিটি গার্ড’ নামে একটি নাটক বানিয়েছিলাম। প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নাটকটির গানও শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। আমার পাশে যখন কেউ আমার নির্মাণ করা নাটক দেখেন কিংবা আমার গান শোনেন ওই আনন্দটা বলে বোঝানোর মতো না। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে ভালো একটি সিনেমা বানাবো।  

কবে দেখতে পাব সিনেমাটি?

আমি এরইমধ্যে কিছু ফিকশন বানিয়েছি। গল্প প্রস্তুত করছি। কেননা আমি মনে করি গল্পই সব। আমি চাই ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কেউ আসুক যিনি আমার গল্প দেখেই মুগ্ধ হয়ে যাবেন, বাজেট নিয়ে ভাববেন না, ওই সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আশাকরি এটা শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। 

mnu raju

সংগীতশিল্পী হিসেবেও আপনার পরিচিতি আছে। শুরুটা কেমন ছিল? 

এক সময় বন্ধু মহলে গান করতাম। তারা বাহবা দিত। পরে অভিনয়ের সময় শুটিংয়ের সেটে গান করতাম। এটা দেখে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ আমার অভিনীত প্রায় চরিত্রেই গান রাখতেন। ওই গানগুলো দর্শকরা বেশ ভালোভাবে নিতেন। ওই অনুপ্রেরণা থেকেই গান করা। আমার দুটি মৌলিক গান আছে। একটির নাম ‘মিছা কথা কমু না’। কোথাও গেলে অনেকে পেছন থেকে বলে ওঠেন ‘মিছা কথা কমু না’। তখন বুঝতে পারি আমাকেই বলছেন। খুব ভালো লাগে এটা।

বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?

নির্মাণেই বেশি সময় দিচ্ছি। বেশকিছু নাটক বানিয়েছি। এগুলোর মধ্যে ‘বালুর বাসা’ একটি। এছাড়া আরও কিছু কাজ হাতে রয়েছে। পাশাপাশি অভিনয়টাও করছি।

আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর