বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে ‘লবিং’ লাগে— কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২২, ১২:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে ‘লবিং’ লাগে— কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
সংগৃহীত ছবি

যোগ্যতার মানদণ্ড বিচারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দিয়ে থাকে সরকার। রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে পরম আরাধ্য একটি অর্জন। 

তবে গেল কয়েক বছর ধরে এই পুরস্কার নিয়ে নানারকম নেতিবাচক সমালোচনা হচ্ছে। একধরনের মানুষের ধারণা, ‘লবিং’ ছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পাওয়া যায় না! এই তালিকায় দেশের জনপ্রিয় কয়েকজন শিল্পীও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ লেখনির মাধ্যমে তারা এসব বিতর্কে শামিল হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নেটিজেনরা বলছেন, যোগ্যদের সরিয়ে রেখে কয়েকটি শাখায় অযোগ্যদের পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। 

যদি নিকট অতীতে ঘুরে আসি তাহলে দেখব, ২০১৫ সালে রিয়াজুল রিজু পরিচালিত ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ সেরা চলচ্চিত্রসহ ৯টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিল। তখনও অভিযোগ উঠেছিল সিনেমাটি গোপনে দেন-দরবার করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।

Rizu
‘বাপজানের বায়স্কোপ’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধেও উঠেছিল লবিংয়ের অভিযোগ । কোলাজ: ঢাকা মেইল

সত্যিই কী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে ‘লবিং’ করতে হয়েছে আপনাকে— প্রশ্ন ছিল রিয়াজুল রিজুর কাছে। কিছুটা ঘুরিয়ে উত্তর দিলেন তিনি। 

রিজু কথায়, ‘আমি লবিং করেছি, কী করিনি— প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের যোগ্যতার প্রশ্নে কথা বলতে হবে। ভালো সিনেমা বানানো যেমন যোগ্যতার ব্যাপার, লবিং করাটাও তাই। শুনতে খারাপ শোনালেও বলি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের যোগ্যতা কী— সেটা জানা প্রয়োজন। আপনাদের যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে লবিং করে পুরস্কার আনুন। এখানে তো সমস্যা দেখি না।’

আপনার ক্ষোভ আসলে কাদের ওপর— জানতে চাইলে রিজু বলেন, ‘পুরো সিস্টেমের ওপর আমার ক্ষোভ। দেখুন, আমি যদি লবিং করতাম তাহলে সরকারি অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র জমা দিয়ে বারবার রিফিউজড হতাম না। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান আশা করেও পাইনি। সরকারি অনুদান ছাড়া এই সিনেমাটি নির্মাণ সম্ভব না। আমার যদি এত ক্ষমতা থাকত, তাহলে লবিংয়ের মাধ্যমে এই ছবির জন্য অনুদান নিয়ে আসতাম। সত্যি বলতে, সচিব অথবা মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে স্মার্টলি কথা বলার মতো স্মার্টনেস আমার নেই।’

তবে রিয়াজের এই কথার সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক নিজামূল কবীর।

দুই মেয়াদে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি নিজেও তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার বিতর্ক নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। কোনোরকম ভনিতা না করে তিনি জানান, জুরি বোর্ডের সুপারিশ শতভাগ কার্যকর হয় না।

Riaz
দুই মেয়াদে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ । ছবি: সংগৃহীত 

রিয়াজ বলেন, ‘জুরি বোর্ড ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দেয় না। সদস্যরা সুপারিশ করেন। এই সুপারিশ সবসময় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত না-ও হতে পারে। সুতরাং কেউ যদি জুরি বোর্ডের সুপারিশ করা নামগুলো পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে করার কিছু থাকে না। বোর্ড মেম্বার হিসেবে শুধু এটুকু বলতে পারি, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। এর বাইরে কিছু বলার এখতিয়ার নেই। কারণ, কিছু নীতিমালার আওতায় আমাদের কাজ করতে হয়। সেই নীতিমালা ভঙ্গ করতে পারি না।’

তবে রিয়াজের এই কথার সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক নিজামূল কবীর। তিনিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এছাড়া চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। 

নিজামূল কবির বলেন, ‘জুরি বোর্ডের সদস্যরা যে নামগুলো সুপারিশ করেন সেগুলো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর বদলে যায় না। তবে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কয়েকটি নাম সাজেস্ট করে। সেটাও সীমিত। যোগ্যতার ভিত্তিতেই জুরি বোর্ডের সদস্যরা সেরা ছবি, শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম সুপারিশ করে থাকেন। এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।’

Nizamul
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক নিজামূল কবির । ছবি: ফেসবুক

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বলছেন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর সুপারিশ করা নাম বদলে যায়, তাদের বলব সেই নামগুলো প্রকাশ্যে আনতে। আমি দায়িত্ব পালনকালে এধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি।’

চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত মনে করেন, যোগ্যরাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হচ্ছেন। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কথা জানালেন তিনি।

Anupam
চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত । ছবি: সংগৃহীত

অনুপম হায়াত বলেন, ‘আমি জুরি বোর্ডর সদস্য নই, তাই এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। তবে আমার কাছে মনে হয়, জুরি বোর্ড স্বচ্ছতার সঙ্গে সেরা শিল্পী নির্বাচন করেন। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দুর্বলতা আছে বলে মনে করি। সেই দুর্বলতাগুলো এভাবে বলা ঠিক হবে না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চলচ্চিত্র) নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৭৫ সালে। তখন ‘লাঠিয়াল’ পেয়েছিল সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। সেরা অভিনেতা হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। ববিতা পেয়েছিলেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।  

আরএসও 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর