রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আব্দুল জব্বারের হারিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

আব্দুল জব্বারের হারিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর

‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘ওরে নীল দরিয়া’– একজীবনে এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গান কণ্ঠে তুলে বাংলা সংগীতে কিংবদন্তি শিল্পী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন আব্দুল জব্বার। তার কণ্ঠ যেন ছিল অর্ফিয়াসের বাঁশি। শ্রোতারা তাতে বুঁদ হয়ে আছেন এখনও। আজ ৩০ আগস্ট বরেণ্য এই গায়কের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এই দিনে সুরের তরী ঘাটে ভিড়িয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল জব্বার। তিনি সংগীতের পাঠ গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে।


বিজ্ঞাপন


১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সংগীতাঙ্গনে যাত্রা শুরু হয় আব্দুল জব্বারের। এর কয়েকবছর পরই তালিকাভুক্ত হন টেলিভিশনে। সেসময় টিভিতে গান পরিবেশনের মাধ্যমে মোটামুটি পরিচিতি অর্জন করেন তরুণ জব্বার।

চলচ্চিত্রের গানে নাম লেখাতেও বেশি সময় নেননি এই গায়ক। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান নির্মিত পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সংগমে’ কণ্ঠ দেন তিনি। তবে আব্দুল জব্বারের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় ১৯৬৮ সালে। সে বছর ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায় ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। গানটি এক লহমায় দখল করে নেয় শ্রোতাদের মন। সেইসঙ্গে আব্দুল জব্বারও রাতারাতি পেয়ে যান তারকাখ্যাতি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে আরোহন করেন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।

আব্দুল জব্বারের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘ওরে নীল দরিয়া’র কথা না বললেই নয় । ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ সিনেমায় আলম খানের সুরে গেয়েছিলেন গানটি। সেসময় তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করা এই গানের আবেদন আজও ফিকে হয়নি।

আব্দুল জব্বারের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘এ ভুবনে কে আপন’, ‘এ মালিকে জাহান’, ‘আমার সে প্রেম’, ‘আমি বসন্ত হয়ে এসেছি’, ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’, ‘এ আঁধার কখনও যাবে না মুছে’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে’, জানি কবিতার চেয়ে তুমি’, ‘কি গান শোনাব ওগো বন্ধু’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’ অন্যতম।


বিজ্ঞাপন


২০০৬ সালের মার্চ মাসজুড়ে বিবিসি বাংলার আয়োজনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নেয় আব্দুল জব্বারের তিনটি গান। এগুলো হলো ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পী। সেসময় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অংসখ্য গানে কণ্ঠ দেন তিনি। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেসময় প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন আব্দুল জব্বার।

বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের ৩১ মে থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। সে বছরের ৩০ আগস্ট সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান অনন্ত লোকে।

আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর