শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সেলুলয়েডের ফিতায় দেশের কথা বলতেন জহির রায়হান

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৪:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

সেলুলয়েডের ফিতায় দেশের কথা বলতেন জহির রায়হান

বাংলা চলচ্চিত্রে হাতেগোনা যে কয়েকজন মেধাবী নির্মাতা এসেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জহির রায়হান। সেলুলয়েডের ফিতায় সমাজের কথা, দেশের কথা বলতেন তিনি। আজ ১৯ আগস্ট তার জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের এই দিনে ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

একাধারে নির্মাতা, উপন্যাসিক ও গল্পাকার জহির রায়হান কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরে ১৯৫৭ সালে ‘জাগো হুয়া সবেরা’ নামে একটি সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নাম লেখান তিনি। ১৯৬৪ সালে তার হাত ধরেই নির্মিত হয় পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’।


বিজ্ঞাপন


১৯৬৬ সালে ‘বাহানা’ নামক একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্রও তিনিই প্রথম নির্মাণ করেন। এরপরের বছর মুক্তি পায় তার ‘বেহুলা’ সিনেমাটি। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সহকারী পরিচালক থেকে নায়কের খাতায় নাম লেখান নায়করাজ রাজ্জাক। মুক্তির পর তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন সিনেমাটি। বাংলার লোকজ কাহিনি থেকে নির্মিত এই সিনেমা ঢাকাই চলচ্চিত্রের ভিত্তি মজবুত করতে ব্যাপক অবদান রেখেছিল। কেননা এই ছবির মাধ্যমেই বাংলা সিনেমার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে দর্শকের।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন জহির রায়হান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় চলে যান। দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে যোদ্ধারা হাতে তুলে নেন অস্ত্র আর তিনি তুলে নেন ক্যামেরা। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’সিনেমাটিরর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি প্রামান্যচিত্র নির্মাণেও জহির রায়হান সেরা ছিলেন। তার নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘বার্থ অব নেশন’, ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ এবং ‘ইনোসেন্ট জিনিয়াস’ বিশ্বজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে অবদান রেখেছিল।

জহির রায়হান নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘কখনও আসেনি’, ‘সোনার কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘আনোয়ারা’। উপন্যাসিক হিসেবেও জহির রায়হান ছিলেন অন্যতম। তার লেখা উপন্যাসগুলো হচ্ছে ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফালগুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘আর কতদিন’, ‘কয়েকটি মৃত্যু’, ‘তৃষ্ণা’।


বিজ্ঞাপন


বাংলা চলচ্চিত্রের এই প্রাবাদ পুরুষের চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকর্মে বারবার উঠে এসেছে দেশ ও দেশত্ববোধের কথা। স্বীকৃতিস্বরূপ জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর বেশকিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এগুলো হচ্ছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪, হাজার বছর ধরে), নিগার (কাঁচের দেয়াল, শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭১, সাহিত্য : মরণোত্তর, ১৯৭২ সালে ঘোষিত), একুশে পদক (১৯৭৭, চলচ্চিত্র : মরণোত্তর) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২, সাহিত্য : মরণোত্তর)।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলে ঢাকায় ফেরেন জহির রায়হান। এসেই মুখোমুখি হন এক দুঃসংবাদের। জানতে পারেন ১৪ ডিসেম্বর থেকে তার বড়ভাই কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবরটি শুনেই খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন ভাইকে। পাগলের মতো খুঁজেও অগ্রজের কোনো সন্ধান পান না তিনি। ঘটনাটিতে বেশ ভেঙে পড়েন এই নির্মাতা।

এদিকে ৩০ ডিসেম্বর তিনি জানতে পারেন মিরপুরে বন্দী করে রাখা হয়েছে শহীদুল্লাহ কায়সারকে। মিরপুর তখনও শত্রুমুক্ত ছিল না। জহির রায়হান ভাইকে উদ্ধারে চলে যান সেই শ্বাপদ সংকুল স্থানে। তারপর আর ফিরে আসেননি। দেশপ্রেমিক এই নির্মাতার লাশেরও কোনো সন্ধান মেলেনি। সেদিন মিরপুরে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে মুক্তিকামী সেনাদের এক ভয়াবহ বন্ধুকযুদ্ধ হয়েছিল। ধারণা করা হয়, সেই যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন জাতির এই কৃতিসন্তান।

আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর